১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নৃশংসতার স্মরণে আজ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন “গণহত্যা দিবস” পালন করেছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণ ঠেকানোর জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কুখ্যাত “অপারেশন সার্চলাইট”- এর অধীনে ঢাকাসহ সারাদেশে বর্বরতা চালায়।
দিবস উপলক্ষে নয়াদিল্লি মিশন ২৫ মার্চ রাতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন, রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী পাঠ, আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও মন্ত্রী (কনস্যুলার) সেলিম মো. জাহামগীর আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হাইকমিশনার সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় ২৫ মার্চ ১৯৭১ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানি নীল নকশার বর্ণনা দেন।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাতে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ সারাদেশে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস ধরে পাকিস্তানি জান্তা গণহত্যা চালিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, এটি ছিল পুরোপুরি একটি “গণহত্যা”। কারণ ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে ও দুই লাখেরও বেশি নারী ধর্ষনের শিকার হয়।
তিনি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, লেখালেখি এবং ডকুমেন্টারি তৈরির মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে “গণহত্যা” বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেশে ব্যাপক হত্যাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় “গণহত্যা” হিসেবে বিবেচনা করেছে, যদিও সেসব দেশে নিহতদের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম ছিল।
হাইকমিশনার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী সম্পর্কে সন্তানদের জানানোর বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ।
এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ‘কালো রাত্রিতে’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নৃশংসতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
কলকাতা, মুম্বাই, আগরতলা এবং গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন/সহকারী হাইকমিশনেও “গণহত্যা দিবস” পালিত হয়েছে।