রাজধানীতে ক্রমাগত বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। যার ফলে বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে পুরো নগরী। তবে সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ও করোনা মহামারিতে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে বায়ুদূষণের তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। গত মে মাসে ঢাকার দশটি এলাকার মধ্যে মিরপুর-১০ এ বায়ুদূষণের হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। আর দূষণ সবচেয়ে কম ছিলো ধানমন্ডি-৩২ এ।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর গবেষণায় বায়ুদূষণের হার এমনটিই দেখা গেছে। তবে এপ্রিল মাসে রাজধানীর শাহবাগে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি ছিলো। আর কম ছিলো গুলশান-২ এ।
মিরপুর ও শাহবাগ এলাকা রাজধানীর ব্যস্ততম ও মিশ্র এলাকা। এখানে মেট্রোরেল প্রকল্প চলার কারণে বায়ুদূষণ বেশি বলে ওই গবেষণায় বলা হয়। এছাড়া মানুষের চলাফেরার সাথে সাথে বায়ুদূষণ কখনও কমে আবার কখনও বাড়ে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বিশেষ করে রাজধানীতে বড় উন্নয়ন প্রকল্প মেট্রোরেল, সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ, রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদির কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো, ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো, ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
সম্প্রতি ঢাকার দশটি স্থানে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিদিন ঢাকায় দু’টি করে মোট ১০টি এলাকায় এই বায়ুর মান পরিমাপ করা হয়। উক্ত গবেষণার সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন ক্যাপস এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
ধানমন্ডি ৩২, পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল, মতিঝিল, আগাঁরগাও, সংসদ ভবন এলাকা, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, গুলশান-২, শাহবাগ, উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর ও মিরপুর-১০ এলাকায় বায়ুদূষণ পরিমাপ করছে ক্যাপস।
জানা গেছে, গত ১২ মে থেকে এক সপ্তাহ বায়ুর দূষণ সবচেয়ে কম ছিলো। বলা যায় গত আট মাসে দূষণ সবচেয়ে কম। তবে এর আগে জানুয়ারিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ১০ থেকে ১২ ভাগ বায়ুদূষণ বেশি ছিলো। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও অন্যান্য বছরের তুলনায় বায়ুদূষণ বেশি ছিলো।
গত ১৪ থেকে ২৪ এপ্রিল সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়ার সাথে সাথে আংশিক যখন লকডাউন ছিলো তার থেকে ৪৩ শতাংশ বায়ু দূষণ কমে যায়। এরপর ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত পূর্ণ লকডাউন থেকে ২৯ শতাংশ বায়ুদূষণ বেড়ে যায়।
সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই চার মাস বায়ুর অবস্থা খারাপ থাকে। এই সময় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বায়ুর মান খারাপ থাকে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঢাকার বায়ুর মান যথেষ্ট ভালো। মে মাসের শেষ দিকে বায়ুর মান যথেষ্ট ভালো। তবে এই ভালোটা বৃষ্টির কারণে। মিরপুর ও শাহবাগ এলাকা রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা এবং এখানে মেট্রোরেল প্রকল্প চলছে এজন্য সেখানে বায়ুদূষণ বেশি।’
দেশে বিধিনিষেধ বা লকডাউন বায়ুদূষণে কী রকম প্রভাব ফেলেছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এপ্রিলে যখন লকডাউন হবে হবে অবস্থা। একটা ঘোষণা দেওয়া হলো ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন হবে। তবে সেটা ইফেকটিভ ওয়েতে যায়নি। অর্থাৎ ৫ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে বায়ুদূষণ বাড়ে প্রায় ২৭ শতাংশ।’
তবে দূষণ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘লকডাউন হতে পারে এজন্য মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়, যার ফলে দূষণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় বায়ুর মানের সূচক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৮ থেকে ২১৫ তে গিয়ে দাঁড়ায়।’
মানুষের কর্মব্যস্ততার কারণে বায়ুদূষণ কমে বা বাড়ে বলে জানান তিনি।