কুমিল্লার মুরাদনগরে অপহরণের পর মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা না পেয়ে আবদুর রহমান নামের পাঁচ বছরের এক শিশুকে হত্যা করেছে তার আপন ফুফা। হত্যার শিকার আবদুর রহমান (৫) উপজেলার গাংগাটিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. ফারুক মিয়ার ছেলে।
তবে হত্যার পর লাশ মাটি চাপা দিয়ে মুক্তিপণের টাকার জন্য এসে আটক হয় অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় শিশু অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা ময়নাল হোসেন মাইনুলকে আটক করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘোড়ারচর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে রবিউল (২৭), ওই শিশুর ফুফা একই গ্রামের নাজমুল হোসেন (৩৫), ফুফু শিরীন আক্তার (২৮) সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার বোড়ারচর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে শিশুটির অর্ধগলিত ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নিজ ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু আবদুর রহমানকে অপরহরণ করে তার ফুফাসহ অন্যান্যরা। এসময় শিশু আবদুর রহমানের বাবার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় পরদিন ফারুক মিয়া মুরাদনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। অপহরণের কিছুদিন পর শিশুটির পিতা ফারুকের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর নম্বরে ফোন করে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। অপহরণকারীদের দেয়া ঠিকানা অনুসারে সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হামিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সাদা পোষাকে মুরাদনগর থানার জাহাপুর ইউনিয়নের ইমামদিকান্দি এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধের উপর অভিযান চালান।
পরে সেখান থেকে মুক্তিপণের সর্বশেষ দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা নিতে আসে অপহরণকারী চক্রের সদস্য ময়নাল ও তার সহযোগীরা টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় এসআই হামিদুল ইসলাম ময়নালকে ধরে ফেললে অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা লাঠি দিয়ে হামিদুল ও এসআই সাইফুলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় হামিদুল ইসলামের ডান পা ভেঙ্গে যায়। অপহরণকারী ময়নাল তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পুলিশ সদস্য হামিদ ও রুবেলকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এ সময় এসআই হামিদের সাথে থাকা বন্দুক দিয়ে ময়নালের পায়ে গুলি করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্য ও অপহরণকারী চক্রের সদস্য ময়নালকে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে ময়নালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার দিবাগত গভীর রাতেই অপহরণের পর হত্যার সাথে জড়িত নাজমুল হাসান ও রবিউল হাসানসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টায় মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অপহরণকারীদের তথ্য মতে উপজেলার বোড়ারচর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণ চক্রের গ্রেফতারকৃত সদস্যদের মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপহরণ ও হত্যা এবং পুলিশ আক্রমণ আইনে মামলা হয়েছে।