মোঃ আনিসুর রহমানঃ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৪ রানের বাংলাদেশর জয়। সিরিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। এক পেশে জয় নয়, ম্যাচের মীমাংসা করতে লড়তে হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। ম্যাচে ছড়িয়েছে উত্তেজনা। মিরপুরে আজকের উইকেটের অবস্থা আগের ম্যাচের মতো করুণ ছিল না। আগে ব্যাট করতে নেমে বেশ ভালো সংগ্রহই করেছিল বাংলাদেশ। এই মাঠে ১৪১ মোটেও খারাপ সংগ্রহ নয়। ওপেনিং জুটিও হয়েছে লম্বা। তবে প্রথমদিকে যেভাবে রান উঠছিল, শেষে তেমনটা ওঠেনি। এই সংগ্রহ নিয়েই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ রানে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় নামা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন দিয়েই বোলিং আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। মেহেদি-নাসুমের পর তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই উইকেট তুলে নেন সাকিব। প্রথম বলে অবশ্য ছক্কা হজম করেছেন। পরের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন রাচিন রবীন্দ্র (১০)। সাকিবের বল তার পায়ে লেগে স্টাম্প ভেঙে দেয়। দলীয় ১৬ রানে কিউইদের প্রথম উইকেটের পতন হয়। পরের ওভারে এসে মেহেদি তুলে নেন আরেক ওপেনার টম ব্লান্ডেলকে (৬)। তাকে দারুণভাবে স্টাম্পড করেন নুরুল হাসান সোহান। ১৭ রানে নেই ২ উইকেট। ৭ম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে শুরু হয় পেস আক্রমণ।
কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম আর উইল ইয়ং জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ১০ম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। কিন্তু সাফল্য পাননি। ৪৬ বলে ৪৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন সেই সাকিব। ১১তম ওভারের শেষ বলে সাইফউদ্দিনের তালুবন্দি হন ২৮ বলে ৩ চারে ২২ রান করা উইল ইয়ং। চতুর্থ উইকেটে ল্যাথাম-গ্র্যান্ডহোমের জুটি যখন জমে যাচ্ছিল, তখন আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। শর্ট থার্ডম্যানে মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (৮)। ১৬তম ওভারে দলীয় ৯২ রানে কিউইদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান মেহেদি। হেনরি নিকোলাসের (১) ক্যাচ নেন সেই মুশফিক।
সাকিবের ব্যক্তিগত শেষ ওভারের প্রথম বলে কোল ম্যাকনকির বিরুদ্ধে লেগ বিফোর উইকেটের জোড়ালো আবেদন হয়েছিল। আম্পায়ার আঙুল তোলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সফল হয় নিউজিল্যান্ড। ওই ওভারের শেষ বলেই (১৭তম) তিন অংক স্পর্শ করে কিউইদের স্কোর। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে তাদের প্রয়োজন হয় ২৮ রান। সাইফউদ্দিনের করা ১৯তম ওভারে রান-আউট হয়েছিলেন ল্যাথাম। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ধরার আগেই গ্লাভস দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন উইকেটকিপার সোহান। সুতরাং তিনি বেঁচে যান। ওই ওভারে আসে ৮ রান।
এর মাঝেই ৩৮ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন ল্যাথাম। জয়ের জন্য শেষ ওভারে কিউইদের দরকার হয় ২০ রানের। বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলেই মিডউইকেটে ক্যাচ ছাড়েন শামীম। ওই বলে আসে ৩ রান। পঞ্চম বলটি বিশাল নো করেন ফিজ। সেটা ল্যাথামের ব্যাট ছুঁয়ে বাউন্ডারি হয়ে যায়। শেষ বলে প্রয়োজন পড়ে ৬ রানের। কিন্তু জয়ের হিসাব আর মেলাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা থেমে যায় ৫ উইকেটে ১৩৭ রানে। ৪ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী। সাকিব ২ উইকেট নিয়েছেন ২৯ রানে। নাসুম নিয়েছেন ১টি। শেষ ওভারের নায়ক মুস্তাফিজ ২৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪১ রান তোলে বাংলাদেশ। সাবধানী শুরু করেন লিটন দাস এবং মোহাম্মদ নাঈম। আগের ম্যাচে ১ রানে আউট হওয়া লিটন আজ ০ রানে কোল ম্যাকনকির বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। জীবন পেয়ে তিনি ধীরে ধীরে হাত খোলেন। আজাজ প্যাটেলের করা তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনের ব্যাট থেকে আসে প্রথম বাউন্ডারি। পরের বলটিও সীমানাছাড়া করেন লিটন। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে আসে ৩৫ রান। ৫৪ বলে এই জুটি পঞ্চাশ স্পর্শ করে। রাচিন রবীন্দ্রের করা ১০ম ওভারে এসে লিটনের ব্যাট থেকে প্রথম ছক্কার দেখা পায় বাংলাদেশ।
ওই ওভারের তৃতীয় বলেই ভাঙে ৫৯ রানের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি। ২৯ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩৩ রান করা লিটন দাস বোল্ড হয়ে যান। পরের বলে আবারও বিপর্যয়। মুশফিকুর রহিমকে স্টাম্পড করে দেন উইকেটকিপার টম ল্যাথাম। ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে ফিরেন মুশি। সাকিব উইকেটে এসেই কোল ম্যাকনকির ওপর চড়াও হন। দুই চারে তুলে নেন ১১ রান। তবে ১১তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের ক্যাচ নেন বেন সিয়ার্স। আম্পায়ার নিশ্চিত ছিলেন না আউট নিয়ে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটা একবার ছেড়ে দিয়েও মাটিতে পড়ার আগে অবিশ্বাস্যভাবে তালুবন্দি করেন সিয়ার্স। ৭২ রানে বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেটের পতন হয়। সাকিব ৭ বলে ১২ রানে।
উইকেটে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ব্রেসওয়েলের করা ১৫তম ওভারে দুটি চার মেরে তিনি দলের স্কোর একশ পার করান। এতক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ওপেনার নাঈম। ৩৯ বলে ৩ চারে ৩৯ রান করে তিনি রাচিন রবীন্দ্রের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। ক্যাচ নেন টম ব্লান্ডেল। হার্ডহিটার হিসেবে খ্যাত আফিফ হোসেনও সুবিধা করতে পারেননি। একবার জীবন পেয়েও ব্যক্তিগত ৩ রানে আজাজ প্যাটেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন। ১৬তম ওভারের পঞ্চাম বলে দলীয় ১০৯ রানে পতন হয় ৫ম উইকেটের। ভাঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৩৪ রানের জুটি।
অধিনায়কের সঙ্গী হন নুরুল হাসান সোহান। হাত খুলে মারতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। হাশিম বেনেটের করা শেষ ওভার থেকে আসে ১১ রান। ইনিংসের শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইল ইয়াংয়ের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন ৯ বলে ১৩ রান করা সোহান। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৫ চারে ৩৬* রানে। নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪১ রান। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। ১টি করে নিয়েছেন আজাজ, ম্যাকনকি এবং হাশিম বেনেট।
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্বাগতিক একাদশে কোনো পরিবর্তন নেই। উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড একাদশে এসেছে দুটি পরিবর্তন। জ্যাকব ডাফির জায়গায় আন্তর্জাতিক অভিষেক হতে যাচ্ছে পেসার বেন সিয়ার্সের। এছাড়া ব্লেয়ার টিকনারের জায়গায় খেলছেন হামিশ বেনেট। গত বুধবার পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ড দল : রচিন রবীন্দ্র, টম ব্লান্ডেল, উইল ইয়াং, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), হেনরি নিকোলস, কোল ম্যাকনকি, ডগ ব্রেসওয়েল, এজাজ প্যাটেল, হামিশ বেনেট ও বেন সিয়ার্স