মোশাররফ হোসেন : বিশ্বের পরাশক্তি ও ধনবান দেশ যুক্তরাষ্ট্র যখন করোনায় কাবু , ৪ লক্ষাধিক মানুষ মারা গেছে । টিকা উৎপাদন ও প্রয়োগে হিমশিম খাচ্ছে । আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা থাকার পরও কানাডার মত দেশ যেখানে টিকা আমদানিতে পিছিয়ে পড়েছে । সেখানে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ টিকা প্রদান শুরু করেছে ।সকল প্রকার অপপ্রচার ও বিভ্রন্তির মুখে ছাই দিয়েছে । সাবাস বাংলাদেশ সাবাস । এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি পরিকল্পনা ও দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য।
একটু পেছনে ফেরা যাক । যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আবিস্কৃত বিশ্বখ্যত টিকা প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনকার টিকা তিনদফা পরীক্ষামুলক প্রয়োগের পর রফতানি শুরুর ঊষালগ্নে বাংলাদেশ টিকা আমদানির জন্য চাহিদাপত্র জমা করেছিল । তখন তারা তাদের এশিয় বিপনন প্রতিনিধি বিশ্বের ৬০ ভাগ টিকা উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনিসটিটিউটের সঙ্গে চুক্তির পরামর্শ দেয় । বাংলাদেশ তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভারচুয়াল সভার অয়োজনে পাইপলাইনে ছিল । যাতে টিকা আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভু৩ ছিল । বাংলাদেশ সেসময় দুদেশের সরকারের মধ্যে ৬ টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে । যার মধ্যে করোনা টিকাও ছিল। সবোপরি সেরাম ও বেক্সিমকো টিকা আমদানি চুক্তি করে ।
এরকম অবস্থায় ঢাকাস্থ সংবাদ সংস্থা এপির বরাত দিয়ে দিল্লির এপি প্রতিনিধি সংবাদ দেয় সেরাম বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনকার টিকা রফতানি করতে পারবেনা । তারা সেরামের সিইও আধার পুনারাওয়ালার উদ্বৃতি দিয়ে বলে , সেরামের বিধিবিধান অনুযায়ী রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । কিন্তু এপি সরকার টু সরকার রফতানির বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি । শুরু হয়ে যায় টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ।
এরপর ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ভারতের স্বাস্থ্য সচিব ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সচিব , দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী , ঢাকা ভারতীয় দূতাবাস ,দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস , সেরামের টিকা রফতানির বিধিবিধান নিয়ে বক্তব্য আসে মিডিয়ায় । যার সারমর্ম ছিল সরকার টু সরকার টিকা রফানিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই । তখন বিষয়টি শীতল হয়ে যায় ।
এরপর ভারতের সেরাম ইনিসটিটিউট ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে অ্যাস্ট্রাজেনকার কোভিশীল্ড টিকার ৫০ লক্ষ ডোজ ঢাকায় প্রেরণ করে । যার ২০ লক্ষ ডোজ ভারত সরকার মৌত্রীর উপহার হিসেবে প্রদান করেছে । যা ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে ।স্বাস্থ্যবিভাগের প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে এসব টিকা সারা দেশে প্রয়োগ শুরু করা হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। জেলাওয়ারি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য নির্ধারিত হাসপাতালে টিকা প্রদান করবেন । ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রথম টিকা নেয় একজন নার্স । ঢাকা মেডিকেল , বঙ্গবন্ধুমেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা জেনারেলসহ মোট ৫টি হাসপাতালে টিকা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে।স্বাস্থ্য কর্মী ,পুলিশ ,সেনাসদস্য, বিডি আর ,দমকল , সিটি কর্পোরেশন ,মিডিয়াসহ জরুরি সেবাদানকারি তথা সম্মুখযোদ্ধাদের প্রথম পর্যায়ে টিকা প্রদান করা হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে ।
এর পাশাপাশি জনগন টিকা পাবেন। সারা দেশে প্রতিদিন জেলাওয়ারি ৫০ হাজার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ।সুরক্ষা এ্যাপসে সকল নাগরিকরে নাম ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন করার জন্য সরকার অনুরোধ জানিয়েছেন।তবে টিকা কেন্দ্রে জাতিয় পরিচয় দেখিয়ে টিকা গ্রহন করা যাবে।
ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে বেক্সিমকো ৩ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনকা কোভিশীল্ড টিকা সেরাম থেকে আমদানি নিশ্চিত করেছে বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন । যা শীঘ্রই পৌছাবে।
অপরদিকে জাতিসংঘের গ্লোবাল এলায়েন্সের (গেভি)আওতায়, মডার্না , ফাইজার,সিনোভেয়াক,স্পুটনিক ভি সহ আরও টিকা আমদানি নিশ্চিত করা হয়েছে ।বাংলাদেশ মোট ১৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টিকা আমদানি করা নিশ্চিত করেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে । পাশাপাশি গ্লোবাল বায়োএনটেক এর টিকা পরীক্ষামূলক উৎপাদনে অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পর তা প্রয়োগ করা যাবে ।
মহামারি করোনা টিকা মানবিক বিষয় । এ নিয়ে অপপ্রচার কাম্য নয় । রাজনীতির সুযোগ নেই । এটা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মত শক্তিশালি দেশ এখন মহাবিপদগ্রস্থ ।ইউরোপও তাই ।পাশাপাশি মানুষ বাঁচাতে বিভ্রান্তি নয় ,বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের ঐক্য চাই ।