দূরবীণ ডেস্ক: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে এই মুহুর্তে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৪ দিনের সফরকালে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহনের পাশাপাশি কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধান উপদেষ্টা । প্রধান উপদেষ্টা দাভোসে ফোরামের সাইডলাইনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সাথে বৈঠক এবং সাক্ষাত করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ও তিমোর-লেসতের রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক:
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) সামিটের সাইডলাইনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া তিনি তিমোর-লেসতের রাষ্ট্রপতি হোসে রামোস-হোর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তাদের মধ্যে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে গ্লোবাল সাউথের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় একটি নিয়মভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান ফিনিশ প্রেসিডেন্ট স্টাব।
প্রধান উপদেষ্টা ফিনিশ প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় প্রেসিডেন্ট স্টাব প্রধান উপদেষ্টাকে শুভকামনা জানান। তিনি গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের একনায়কতন্ত্রের সময়ে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাটের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট হয়েছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বড় আন্তর্জাতিক বৈঠক করার পরিকল্পনার কথাও জানান অধ্যাপক ইউনূস; যার মাধ্যমে তাদের দুর্দশাকে যেন বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আবার দৃঢ়ভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পাইতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনের ফাঁকে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তবে তাদের মাঝে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলাপ হয়েছে কি না সে বিষয়ে জানানো হয় নি।
এর আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টা জুরিখে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান সুইজারল্যান্ডের জেনেভার রাষ্ট্রদূত মো. আরিফুর রহমান। আগামী ২৫ জানুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসগেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তাদের এ সাক্ষাৎ হয়।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টাকে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান হিউসগেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির মিউনিখে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক এ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হবে।
সাক্ষাৎকালে তারা জুলাই বিদ্রোহ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং অনলাইনে ভুল তথ্য প্রচার নিয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত হিউসগেন বলেন, ফেসবুকের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
তিনি পরামর্শ দেন যে বাংলাদেশ ইউরোপীয় দেশগুলোর উদাহরণ অনুকরণ করে একটি আইন প্রণয়ন করতে পারে যাতে বিষয়বস্তু যাচাই করার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও যোগ দেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ব সরকার সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার সুইজারল্যান্ডের সুইস শহরে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার পাশে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূসকে এ আমন্ত্রণ জানান আমিরাতের সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লাতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম। এ বছর ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব সরকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে উভয়পক্ষই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করেছেন।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাত করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি । এ সময় তিনি বলেন তার সংস্থা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বাংলাদেশকে সমর্থন করবে।
রোহিঙ্গা সংকটের জন্য, বিশেষ করে এই বছরের শেষের দিকে এই বিষয়ে একটি বড় বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সমর্থন চাওয়ার পর গ্র্যান্ডি বলেন, আমরা আপনাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনার কথা আরও গুরুত্ব বাড়াবে।
প্রায় ১ লাখ শরণার্থীর আগমন বাংলাদেশের ওপর আরও বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশ্বের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তারা আরও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্য উন্নত উপকরণ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। পূর্বে, রোহিঙ্গাদের কেবল বাঁশ এবং ত্রিপল দিয়ে আশ্রয় তৈরি করার অনুমতি ছিল।
বৈঠকে তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন, যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে তিনি রোহিঙ্গা সংকটের জন্য একজন উচ্চ প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন এবং তিনি সব সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করছেন।