আগুন যেন সুন্দরবনের পিছু ছাড়ছে না। বছর ঘুরতে না ঘুরতে সুন্দরবনের প্রায় একই এলাকায় বার বার আগুন লাগছে। একের পর এক আগুনে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সুন্দরবন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ২৫ বার আগুন লেগেছে। এ আগুনে পুড়েছে প্রায় ৮১ একর বনভূমি।
বনবিভাগের সূত্রে জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০২১ সনের ৩ মে পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় বিশ বছরে সুন্দরবনের প্রায় ৭২ একর বনাঞ্চল আগুনে পুড়েছে। ২৫ বারের অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের প্রায় ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার। একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুইবার। ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুইবার। ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার।
২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার। ২০১১ সালে নাংলীতে দুইবার। ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার। ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার। ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার এবং চলতি বছরের ৮ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ আগুন লাগে গত সোমবার (২ মে) সকাল ১১টায় সুন্দরবনের দাসের ভারনী এলাকার বনে আগুন লাগে। পরদিন মঙ্গলবার বিকালে ৩০ ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রনের কথা বলে বন বিভাগ ও ফায়ার সাভির্সের ৩ ইউনিট সন্ধ্যায় সুন্দরবন থেকে চলে আসলেও আজ (৫ মে) বুধবার ভোর থেকে একই স্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যে ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আবারও গাছপালা ও লতাগুল্মে দাউ-দাউ করে ফের আগুন জ্বলতে থাকে। আগুন লাগার খবর পেয়ে সকালে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা ইউনিয় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ শুরু করেছে। এরপর মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের আরো ফায়ার সার্ভিসের আরো দুটি ইউনিট সুন্দরবনে আগুন নিভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। লোকালয় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার গহীন বনের দাসের ভারানী এলাকায়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্সক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন তৃতীয় দিনেও শরণখোলা রেঞ্জ দাসের ভারনী এলাকার বনে জ্বলতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শরনখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের আরো ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটসহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা সুন্দরবনে আগুন নিভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বন বিভাগ। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে (ডিএফও) প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।