চোখ মানবদেহের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল অঙ্গ। স্বাভাবিক চলাফেরা, শিক্ষাগ্রহণ, খাদ্য গ্রহণসহ জীবনের প্রতিটি ধাপে চোখের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই চোখের দৃষ্টিশক্তি সচল রাখা খুবই জরুরি।
কিন্তু কখনও নিজেদের অজান্তে আবার কখনও বা কিছু অভ্যাসের কারণে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে ফেলছি আমরা। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি মূলত বংশগত, বয়স এবং ইলেকট্রনিকস গেজেট ব্যবহারের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কিছু খাবার খাওয়া জরুরি, কারণ এসব খাবার ফটোড্যামেজ কমিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
এখানে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হল যেগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
গাঁজর খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং দৃষ্টিশক্তির অবনতি রোধ করতে পারে। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে গাঁজর।
ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতের ভারসাম্য বজায় রেখে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এ ছাড়া, রেটিনার কাছাকাছি অঞ্চলটি ডিএইচএ (DHA) নামক এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দ্বারা তৈরি হয়। তাই স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ডিম অতি জরুরি অ্যামাইনো অ্যাসিড, পানি এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন দ্বারা সমৃদ্ধ একটি খাবার। এ ছাড়া ডিমের কুসুম লুটেইন এবং জিক্সাথিনের একটি ভাল উৎস যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে উপকারী।
বাদাম স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ই এর একটি বড় উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গবেষণায় আরও জানা গেছে যে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ বাদাম খাওয়া বয়স-সম্পর্কিত ছানি গঠন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে অবশ্যই প্রতিদিন এক মুঠো নানা ধরনের বাদাম খাওয়া উচিত।
দুধ এবং দই চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য খুবই উপকারী। দুগ্ধজাত এসব খাবার ক্যালসিয়াম আর ফসফরাস ছাড়াও জিংক এবং ভিটামিন এ দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে। ভিটামিন এ কর্নিয়াকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং জিংক লিভার থেকে চোখে ভিটামিন এ পরিবহন করতে সাহায্য করে। জিংক রাতের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে এবং ছানি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, এ, বি এবং সি, আয়রন এবং জিংকের মতো খনিজ রয়েছে। এ ছাড়া লুটেইন এবং জিক্সানথিনের মতো ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে। ক্যারোটিনয়েড, লুটেইন এবং জিক্সানথিনে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পালং শাক খাওয়া ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এতে জিংক থাকায় পালংশাক কর্ণিয়াকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্যাপসিকাম ভিটামিন এ, ই এবং সি আর জিক্সানথিন এবং লুটেইনের একটি ভাল উৎস। এসব ভিটামিন এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলি চোখকে ম্যাকুলার অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করে রেটিনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতাতে ভরপুর একটি সবজি ব্রোকলি। শরীরের সব অঙ্গের জন্য উপকারী এই সবজি। ব্রোকলিতে উপস্থিত ভিটামিন এ, ই, সি এবং লুটেইন ফটোড্যামেজ এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
মিষ্টি আলু দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুতে জিক্সানথিন এবং লুটেইন ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দেয়।
সূর্যমুখী বীজ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সুপার ফুড। এই বীজ ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে পরিপূর্ণ। এই পুষ্টিগুলি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখ থেকে বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে চোখকে পরিষ্কার রাখে।
কমলা, লেবু, বেরির মতো সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন-সি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকারক অক্সিজেন র্যাডিকেলগুলিকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং চোখের পেশীগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি চোখের মধ্যে উপস্থিত রক্তনালির স্বাস্থ্য উন্নতিতেও সাহায্য করে।
সূত্র: স্টাইলক্রেজ ডট কম