দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় গত বছরের মতো এবারও অন্যান্য সব খাতের পাশাপাশি রাজনীতিতেও এর সরাসরি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে সরকার গত সোমবার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে এক নম্বরেই বলা হয়েছে, ‘সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ যেকোনো উপলক্ষ্যে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে।
প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমণ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে।’ আর ১৫ নম্বর নির্দেশনায় রয়েছে, ‘সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।’ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবং করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আবারও ঘরোয়াভাবে সীমিত কর্মসূচিতে ফিরছে রাজনৈতিক দলগুলো।
সরকারি নির্দেশনার পরদিনই গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে দলের সব কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এখন থেকে আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের কোনো কার্যক্রম বাইরে করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে কার্যক্রম পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ জানা গেছে, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বাইরের কর্মসূচি সীমিত বা আপাতত স্থতিগ রেখে ঘরোয়া রাজনীতিতে ফিরছে।
গত বছরের মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে রাজনীতি পথ-ঘাট-মাঠ ও দলীয় কার্যালয় ছেড়ে ঘরে ঢুকে যায়। চলে ‘ভার্চুয়াল রাজনীতি’ বা ‘ই-রাজনীতি’। করোনার থাবায় সব রাজনৈতিক দলেরই কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশব্যাপী থাকা বিভিন্ন স্তরের কার্যালয়গুলো গত বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে টানা কয়েক মাস অঘোষিত লকডাউনে চলে যায়। রাজনীতি হয়ে পড়ে পুুরোপুরি ভিডিওবার্তা, ভিডিও কনফারেন্স, ইমেইল, ফোন, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার-নির্ভর।
লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়সমূহ খুলতে শুরু করে। নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেন। ভার্চুয়াল রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বের হতে না পারলেও বিভিন্ন দিবস ও ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত ও নরম কর্মসূচি পালন করে আসছে কয়েক মাস ধরে। করোনার মধ্যেই কয়েকটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনও হয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ আবারও বাড়তে থাকায় স্থগিত হতে পারে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে দেশে প্রথম ধাপে ৩২৩টি ইউপিতে ভোট শুরু হওয়ার কথা।
গত বছরের মাঝামাঝিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর সরব হয়েছিল বাম দলগুলো। তবে তা মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধনেই সীমিত ছিল। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বাম দলগুলো। তবে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পর সেই আন্দোলন শেষ হয়। বেশ কয়েক বছর পর হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ইসলামি দলগুলো হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর কার্টুন প্রকাশ নিয়ে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভে নেমে করোনার মধ্যেও রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করে। গত বছরের শেষ দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে হেফাজত রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন রাস্তায় বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ করে। সংঘর্ষে হতাহতের প্রতিবাদে দেশব্যাপী রবিবার হরতালও করে হেফাজত। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের একাধিকার সংঘাত বাঁধে। তবে করোনার নতুন প্রকোপে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথের কর্মসূচি সীমিত করতে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের যে উদ্যোগ, সেটা কখনোই লক্ষ করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি স্থগিত করেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দলের সভা করে জানানো হবে।’