1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
January 17, 2025, 7:17 am

আরব বসন্তের শেষ ‘স্বৈরশাসক’

  • প্রকাশিত : রবিবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
  • 15 বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

 

লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি… তিউনিসিয়ায় বেন আলি… ইয়েমেনে আলি আবদুল্লাহ সালেহ… মিসরে হোসনি মোবারক… আর এখন সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ। মধ্যপ্রাচ্যের সকল শাসক যাদেরকে ২০১১ সালে আরব বসন্তের অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘‘স্বৈরশাসক’’ বলে অভিহিত করেন। আরব বিশ্বের এই স্বৈরশাসকরা এখন ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে আরব বসন্তের বাইরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া ইরাকের সাদ্দাম হোসেনও এখন ইতিহাসের পাতায়।

বিক্ষোভকারীদের সবার লক্ষ্যবস্তুর মাঝে কেবল বাহরাইনের রাজা হামাদ বেঁচে গেছেন। অন্যদের মতো ‘‘বিপ্লবী প্রজাতন্ত্র নয়’’, বরং উপসাগরীয় আরব রাজতন্ত্রের প্রধান হওয়ায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু সংস্কার প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০১১ সালে রাজা হামাদ বলেছিলেন, ‘‘আমিও সিরিয়ার পথে যেতে পারতাম। কিন্তু এর পরিবর্তে আমি জনতার দাবি শুনেছি। কেবল আংশিক দাবি মেনে নিয়েছি।’’

তবে জুতসই গণতন্ত্র হওয়া থেকে এখনও অনেক দূরে রয়েছে বাহরাইন। যা আপাতদৃষ্টিতে বাশার আল-আসাদের সিরিয়ার চেয়ে কিছুটা সুখী জায়গা। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পাঁচ বছরের দীর্ঘ রাজত্বের সময় সন্ত্রাস আর সহিংসতার কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করেছিল গোষ্ঠীটি। তবে এখন পর্যন্ত সিরিয়ানদের ওপর সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটির সরকারই।

স্যুটেড-বুটেড বাশারের পেছনে জ্বালাময়ী পোস্টার, সঙ্গী-সাগরেদদের হাততালি, পার্লামেন্টের বাছাই করা সদস্যরা তার ভূগর্ভস্থ গুলাগ কারাগারের দেয়াল রক্তে ভিজিয়ে রেখেছিল।

 

• বাবার পথে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেন আসাদও

আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদ প্রায় ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বাশার আল-আসাদের জন্মের সময়ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময়ই মিসর ও সিরিয়া মিলে স্বল্পকালীন যে আরব প্রজাতন্ত্র করেছিল তা ভেস্তে যাওয়ার পর বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে।

অন্য আরব দেশের মতো সিরিয়াতেও গণতন্ত্র ছিল না ও বহুদলীয় নির্বাচন হতো না। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সেখানকার সব দেশেই আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিল। আসাদের পরিবার যে সম্প্রদায়ের ছিলেন তারা ছিলেন সিরিয়ার খুবই অনগ্রসর একটি সম্প্রদায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

হাফিজ আল-আসাদ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাথ পার্টির সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন। পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৭১ সালে। এরপর ২০০০ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ওই পদেই বহাল ছিলেন।

হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দ্রুতই প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ। তবে, এজন্য দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্টের সর্বনিন্ম বয়স ৪০ বছর থাকার যে বিধান ছিল তা পরিবর্তন করতে হয়।

দায়িত্ব নিয়ে তিনি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনার কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি আসমা আল-আখরাসকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান- হাফিজ, জেইন এবং কারিম।

প্রথম দিকে তার রাজনৈতিক সংস্কার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বক্তব্য অনেককে আশাবাদী করেছিল। তার নেতৃত্বের স্টাইল ও পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত আসমার সাথে জুটিবদ্ধ হওয়া- অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছিল।

কিন্তু ২০০১ সালে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন অভিযান চালায় ও বহু সোচ্চার কণ্ঠকে আটক করে। বাশার আল-আসাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমিত সংস্কার করলে ব্যক্তি খাত উৎসাহী হয়ে ওঠে। তবে তার শাসনের প্রথম দিকে উত্থান হয় তার চাচাতো ভাই রামি মাখলৌফের। তিনি সম্পদ আর ক্ষমতার সমন্বয়ে বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন।

তার সময়ে অনেকগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হলেও তা সফল হয়নি। বরং বিরোধীদের দমন ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেন। বছরের পর বছর ধরে নিপীড়নের শিকার হওয়া বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত রোববার দেশটির রাজধানী দামেস্ক ঢুকে পড়েন এবং বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে অজানা গন্তব্যে চলে যান। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমেই অবসান হলো সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের।

• বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আসাদ?

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের তড়িৎগতির আক্রমণের মুখে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটেছে। দেশটির ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘রাজধানী দামেস্ক এখন আসাদ মুক্ত।’’ বিদ্রোহীদের দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ার সময় ব্যক্তিগত একটি বিমানে করে উড়াল দিয়েছেন বাশার-আল আসাদ। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বাশার-আল আসাদ সম্ভবত সিরিয়ার বাইরে রয়েছেন। যদিও সিরিয়ার দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ‘‘প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিমান দুর্ঘটনার মারা যাওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দামেস্ক থেকে তাকে বহনকারী বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে অনেকটা আকস্মিকভাবে দিক পরিবর্তন করে। বিমানের এই দিক পরিবর্তন নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে বিমানের চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার বলছে, আসাদকে বহনকারী বিমানটি সিরিয়ার মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ফ্লাইটরাডারের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দখল নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই একটি বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে। বিমানটি প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়েছিল। ওই অঞ্চলটিতে আসাদ-সমর্থিত আলাউইত সম্প্রদায়ের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু সেখানকার আকাশে পৌঁছানোর পর আকস্মিক ইউ-টার্ন নেয় বিমানটি। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য বিপরীত দিকে উড়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বিমানটি।

তবে দামেস্ক থেকে উড্ডয়ন করা ওই বিমানের প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদ ছিলেন কি না তা তাক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। যদিও সিরিয়ার দুটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে বরেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তার বিমানটি কেন আকস্মিক ইউটার্ন নিয়েছে, সেটি ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে।

এদিকে, সিরিয়ার লৌহশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের সাথে সাথে দেশজুড়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন লাখ লাখ মানুষ। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গাজী আল জালালি সিরিয়ায় অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সিরীয় নাগরিকরা তাদের নেতা বেছে নেবেন।

জালালি বলেছেন, দেশের এই ক্রান্তিকাল অতিক্রমের জন্য তিনি বিদ্রোহী কমান্ডার ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির সাথে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। যা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের পাশাপাশি তার সন্তান ও ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কোথায় রয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে সিরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, আসাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না।

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park