মোশাররফ হোসেন : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ,বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের দিনবদলের নিয়ামক ও হৃদয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৮ কোটি বাঙালিকে “দূরবীণ২৪ অনলাইন নিউজ পোর্টাল”এর পক্ষ থেকে জানাই লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
একই সঙ্গে “ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে .. বাংলাদেশের রক্তিম সূর্য আনলো যারা,” আমরা শ্রদ্ধাভরে তাদের স্বরণ করি । ২৫মার্চ , ১৯৭১ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহীনি তাদের প্রদেশ তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে ট্যাংক ,মেশিনগান , রকেট লান্সারসহ নিরিহ জনতার ওপর যে বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় তার প্রামান্য চিত্র দেখলে আজও গা শিউরে ওঠে । মানুষের বিবেক স্তভিত হয়ে যায় । ভয়াল সেই রাত্রি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘কালো দিন’ । ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার ,২০২১ বাংলাদেশের রাত ৯টায় এক মিনিট আলো নিভিয়ে কালো রাত্রি সরণ করা হবে ।এটা সারা বিশ্বে একযোগে বাংলাদেশের নাগরিকরা পালন করবে বলে জানা গেছে ।
বর্বরোচিত এ ঘটনার জন্য জাতিষংঘে ৫০ বছরেও পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি ।কিন্তু ১৯৭১ সালের২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর’৭১ বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মদান ও ২ লক্ষ মা বোনের সভ্রমহানির পর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করে । একজন মুক্তিযোদ্ধার জবানবন্দি ও প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে আজ এসব ইতিহাস ।
এরপর পাকিস্তান বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কারাগার থেকে ছেড়ে দিলে বৃটেন ও ভারত হয়ে তিনি ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশে ফিরে আসেন । কিন্তু তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন ঠিক তখন একাত্তুরের পরাজিত শক্তি দেশী ও বিদেশি চক্র মিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে । ক্ষমতা দখলকারিরা দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে সচেস্ট হয় । বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার রহিত করে তাদের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকুরি দেয়া হয় । যুদ্ধাপরাধীদের সরকারের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বানানো হয় । ১১০০ মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে হত্যা করা হয় । ১১০০০ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হয় ।
এরকম অবস্থায় ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহনের পর ধীরে ধীরে রাজনীতির দৃশ্যপট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সুদৃঢ় হতে শুরু করে । পাকিস্তানি ভাবধারা ও মুক্তিযুদ্ধের ভাবধারা , রাজনীতিতে এরকম একটা রেখাচিত্র তৈরি হয়ে য়ায় ।
তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচনের পর ২০০৭ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওযামী লীগের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতার পক্ষের ১৫ দলীয় জোট জয়লাভ করে । এরপর বাংলাদেশের দিনবদলের পালা শুরু হয় । আজও যা চলছে । বাংলাদেশ এখন উন্নয়ণশীল দেশ , মধ্যম আয়ের দেশ । যাদুটা কী ? নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ । এ কথা শেখ হাসিনার । ২০১৮ সালে টরন্টোর কনভেনসন সেন্টারে দলীয় কর্মী সমাবেশে আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি এ কথা বলেছিলেন ।আসলে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে , বাংলাদেশে নারী বিপ্লব ঘটেছে ।
স্বয়ংসম্পূর্ণ পল্লীসমাজের যুগে আমাদের ছিল গোলাভরা ধান । পুকুর ,খাল বিল ভরা মাছ।বাড়িতে বাড়িতে ছিল হাস মুরগী, গরু । কিন্তু পরবর্তীতে কার্তিক অগ্রহায়ন ও চৈত্র বৈশাখ মাসে মানুষের খাদ্য ভাব শুরু হয় ।পরনে কাপড় নেই । ছন ও মাটির ঘরে বসবাস করে মানুষ । এভাব্ইে চলে যায় ১৯৭১ পর্যন্ত ।
কিন্তু ২০২০সাল ,করোনার জন্য চলে গেছে অনেকটা কর্মহীন । মানুষ কী না খেয়ে মরেছে ?না তা হয়নি । এখন আমাদের ভাতের অভাব নেই ।মাছেরও অভাব নেই ।স্বাধীনতার পর এখন চালের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ । শাকসবজি , ফলমূল সবসময় মিলছে । মানুষের গায়ে জামা আছে । পায়ে জুতা আছে ।বাড়িতে আছে বিদ্যুত ।স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এসব তথ্য কী বলে, আমরা ভাল আছি ।
স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের ৮০-৯০ভাগ মানুষ ছিল দরিদ্র । মানুষ ১০০ টাকার নোট তো দূরের কথা ১০ ,৫ টাকার নোট দেখতো অনেক কষ্টে । চা কফি ছিল দুর্লভ বিষয় । আর এখন বাংলাদেশী টাকা নয় , দেশের বহু এলাকায় মানুষের হাতে ডলার , রিয়াল, ইউরো ।এটা কী ভাবা যায় ? বিদেশ নয় ,ভারতে ভ্রমণে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০-২৫ ডলারের সংযুক্তির জন্য তদবির লাগতো । আর এখন ৫,১০ হাজার ডলারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে হয়না । বাণিজ্যিক ব্যাংকে গেলেই পাওয়া যায় । এক থেকে দেড় কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত । লেখাপড়া ও গবেষণা করছে । প্রতিবছর তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠাচ্ছে । ২০২০ সালে তারা পাঠিয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার । পৌনে ২ লক্ষ কোটি টাকা ।
১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের বৈদেশিক মু্দ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ কোটি ডলার । এখন ৪৪ -৪৫বিলিয়ন ডলার । দিন দিন তা বেড়ে চলেছে ।গ্রামে গ্রামে রেমিট্যান্স প্রাপকরা তাদের ঘরবাড়ি পাকা করছে ।পানির জন্য টিউবওয়েল বসাচ্ছে ।স্বাস্থ্য সম্মত সেনিটেশন ব্যবস্থা করছে । কৃষি জমিতে পানির জন্য সেচের ব্যবস্থা করে সমবায়ভিত্তিতে আধুনিক যন্ত্রে ধান কেটে ঘরে নিচ্ছে । নতুন নতুন পেশার জন্ম হচ্ছে । বদলে গেছে অনেক ঐতিহ্যবাহি পেশা । তরুন প্রজন্ম নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছে ।কম্পিউটারে আউট সোর্সিং , মোটরসাইকেল , ইজি বাইকে তারা কাজ করছে । ১০ -১৫ মাইল দূরে দাওয়াত খেয়ে আলোয় ভরা রাস্তায় নিরাপদে বাড়ি ফিরছেন গ্রামের মানুষ । গ্রামে গ্রামে মিনি হাট । উপজেলায় বিশাল বিশাল দোকান । বড় বড় শহরের মত বাজার । ঈদ ,পূজার কেনাকাটা গ্রামে বসে করছেন । দোকানিরা এখন আর মোকামে গিয়ে বাজার করেন না। পাইকারি বিক্রেতারা মোবাইলে লেনদেন করে গ্রামেগ্রামে মালামাল পৌছে দেন ।মহিলারা রাতে নিরাপদে বাজার করেন ।
উপজেলায় হাই স্কল , কলেজ ,মহিলা কলেজ । লজিং থেকে পড়াশোনার যুগ আর নেই এখন বাড়িতে বসে ইন্টারনেট সুবিধায় লেখাপড়া করে তরুন প্রজন্ম । বিদেশের ছাত্ররাও দেশে বসে করোনায় লেখাপড়া করছে । তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে । পরীক্ষায় তাদের ফলাফল ভাল । তারা উপজেলা শহরে নানা বৃত্তিমূলক কাজ করে।
গ্রামের সম্মানী মানুষ এখন নিজ নিজ বাড়িতে থাকেন ।৫০ বছরে গ্রাম ,শহরে রুপলাভ করেছে ।সুযোগ সুবধিায় এসেছে পরিবর্তন ।ঢাকা যেতে আগে যেখানে লাগত ৫ – ৭ ঘন্টা ।এখন ২- ৩ঘন্টায় যাওয়া যায় । আধুনিক বাস ,লঞ্চ ।ওয়াটার বাস । কত কী ?
বিভিন্ন জেলার সংগে সড়ক ও নৌ ,রেল যোগাযোগ অতি নির্ভরযোগ্য । চারলেন ,আটলেন মহাসড়ক । সেতু আছে । নদীতে ফেরির কষ্ট ,কমে গেছে । ব্শ্বি ব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে নিজেদের অর্থে দীর্ঘ পদ্মা সেতু এখন দৃশ ̈মান ।
পদ্মা নদী বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের হৃদয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ২৯টি জেলার মানুষের জীবন বদলে যাবে এ সেতু ব ̈বহার করে ।দক্ষিণ পশ্চিম অনচলের মানুষ ২- ৩ ঘন্টায় এখন ঢাকা যাওয়া আসা করবেন ।
গেল ২০ বছরে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিধান করেছে ।সমুদ্র মহীসোপান জয় করে ৪৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা নিজেদের আওতায় এনেছে বাংলাদেশ । ঢাকার যানজট নিরসনে মেটেধারেল, সিটি ওয়াটার সার্কুলার রুট চালুকরতে যাচ্ছে ।ঢাকা চট্টগ্রাম বুলেট টেধন ,কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল ,মাতার বাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর ,মঙলা সমুদ্র বন্দর আধুনিকায়ন কাজ চলছে । দ্বিতীয় আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ।সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে গ্লানি মুক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সরকারি উদ্যোগে আশ্রায়ণ প্রকল্পে দরিদ্র মানুষের জন্য ৭০ হাজার বাড়ি হস্তান্তর করে চমকে দেয়া হয়েছে । সারা দেশে তৈরি হবে ৫ লক্ষ বাড়ি । অস্চ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, পংগু ও বীরাঙ্গনাদের জন্য বাড়ি তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের মধ্যে ভাতা বৃদ্ধি করে যুগোপযুগি করা হয়েছে।
৫০ বছর আগে গ্রামের মানুষ সন্ধ্যায় ভাত খেয়ে ,কুপি বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়তো ।এখন ৩২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা আমাদের । ছাত্র -ছাত্রীরা রাতে বিদ্যুতের সুবাদে লেখাপড়া করে । রুপপুর পারমানবিক ,পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প কাজ শেষ হলে আরও বিদ্যুত যোগ হবে জাতীয় গ্রীডে ।ভারত ,চীন ,রাশিয়া ,জাপান , দ:কোরিয়া,বৃটেন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করেছে কোটি কোটি ডলার । যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ আমাদের অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজে সহযোগিতা করছে ।ভুটান পানি বিদ্যুত দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।নেপাল ও শ্রীলংকা যুক্ত হচ্ছে আনচলিক বাণিজ্যে । ভারতের সংগে সীমানা চুক্তির পর এখন নদীর পানি বন্টন চুক্তির অপেক্ষায় বাংলাদেশ । তাদের সংগে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ১৯৬৫ সালের পর এখন সহজ করা হয়েছে ।সমপ্রতি করোনা টিকা প্রদানে ভারতের সেরাম সময়মত টিকা সরবরাহ করে বন্ধুত্বের নিদর্শন রেখেছে । বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশ ও প্রতিবেশি ভারত ও চীনের সংগে ভারসাম্য বজায় রেখে নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে। কাজটি খুবই কঠিন । এজন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের দৃঢ়তা বাংলাদেশকে উচ্চাসনে পৌছে দিয়েছে ।
সর্বোপরি বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৭ -২৭ মার্চ ১০ দিনব্যাপি জাতীয় অনুষ্ঠান দেশবাসিকে ঊজ্জিবীত করেছে । জাতিসংঘ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ,রানী এলিজাবেথ , পোপ ফ্রান্সিস শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পাঠিয়েছেন । অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা ও দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফায় আলোকসজ্জা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শণ বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে ।এটা
বিশাল অর্জন ।