রোববার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। সেজন্যই হয়ত আমরা এটা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
“তবে সামনে শীত, আরেকটু হয়ত খারাপের দিকে যেতে পারে। তবুও আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি থাকতে হবে।”
গতবছরের শেষভাগে চীন থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে তিন কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, কেড়ে নিয়েছে সাড়ে ৯ লাখ মানুষের প্রাণ।
গত মার্চে বাংলাদেশে এ ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৮ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৩৯ জনের।
ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, যাকে ‘সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ’ বলা হচ্ছে। আগমী শীতে এ ভাইরাসের প্রকোপ ফের বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার পক্ষে অনুদান গ্রহন করেন।
বাংলাদেশ অ্যাসিয়োসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এ অনুষ্ঠানে ১৬৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট ১০ লাখ টাকা, মিনিস্টার গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬০ লাখ টাকা, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ৪০ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে বলে সরকার প্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
এই অনুদান সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বলেন, “এটা ঠিক যে এই করোনাভাইরাসের কারণেই (সরাসরি উপস্থিত থেকে) দেখা হচ্ছে না। তবুও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপনারা যে কষ্ট করে এসেছেন আমার অফিসে, সেজন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেন ভালোভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএবি প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যাংক মালিকদের বিভিন্ন দাবি সরকার ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ বিবেচনা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু কিছু ব্যাংক আছে অতি দুর্বল হয়ে যায়। সেইক্ষেত্রে অনেক সময় মার্জ করাতে হয়। সেটা বিবেচনা করে দেখতে হবে কোনটা ঠিক মত চলছে বা কোনটা চালাতে পারছে কিনা… বা সেইগুলো বিবেচনা করেই করা হবে। অবিবেচনা করে কিছু করা হবে না। এইটুকু ভরসা রাখবেন।”
‘যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে’ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সদস্যরা এগিয়ে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রাইভেটে ব্যাংকটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরাই নিয়েছিলাম। আমরাই দিয়েছি সব থেকে বেশি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ যাতে ব্যাংকিং ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। এমনকি কৃষকদের ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, সব থেকে বড় কথা আমরা যত বড় প্রাইভেট ব্যাংক দিয়েছি, ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান হয়েছে, অনেক মানুষের চাকরি হয়েছে।… আর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে ব্যাংকগুলো যাতে ভালোভাবে চলে আমরা সেটাই চাই।”
করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষের কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সবার সুস্থতা কামনা করেন এবং ভাইরাসের প্রকোপ থেকে দেশ ও সারাবিশ্বের মানুষের মুক্তির জন্য দোয়া চান।