অর্ধেকের বেশি সময় শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকলেও টিউশন ফির চাপে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। স্কুল থেকে লেখাপড়ার বিষয়ে খোঁজখবর না নিলেও টিউশন ফি আদায়ে নিয়মিত তাগাদা আসছে। পুরো টিউশন এবং পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সুযোগ থাকবে না বা ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে এমন আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অভিভাবকদের ভাবনায় ফেলেছে। বছরের শেষ দিকে এসে টিউশনসহ বিভিন্ন নামে অন্যান্য ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ না করতে পারলে বিদ্যালয়গুলো হয়তো তাদের সন্তানদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের সুযোগ দেবে না—বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে অনেক অভিভাবক টিউশন ফি পরিশোধ করেননি। এখন তারা শঙ্কায় রয়েছেন। কোনো কোনো স্কুলে একবারে তাদের প্রায় পুরো বছরের টিউশন ফির জন্যই চাপ দেওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারিতে অনেক অভিভাবক চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। গ্রামে ভর্তির জন্য ট্রান্সফার সার্টিফিকেটর জন্য স্কুলে গেলে পুরো টিউশন ফি পরিশোধের জন্য তাদের বলা হচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, করোনাকালে বেশির ভাগ স্কুলেই কোনো কার্যক্রম নেই। কিছু প্রতিষ্ঠানে মে-জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস চালু হয়। এতে খুব একটা খরচ নেই। বিদ্যুত্, পানির বিলসহ অস্থায়ী যেসব খরচ ছিল সেগুলো হচ্ছে না। এরপরও টিউশন ফিতে কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না স্কুলগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা অনলাইনে ক্লাস চালু করেছেন তাদের বেশির ভাগই ‘লোক দেখানো’ ক্লাস নিচ্ছেন। টিউশন ফি আদায়ের কৌশল হিসাবে এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাবার পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায় করতে বলা হয়, কিন্তু স্কুলগুলো এই নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছে না।
টিউশন ফি নিয়ে গত তিন মাস ধরে নানা অভিযোগ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলেও তাতে খুব একটা সুফল পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও করোনাকালে টিউশন ফি নিয়ে একটি নির্দেশনা তৈরির কাজ শুরু করেছিল। প্রকৃত অসচ্ছল অভিভাবকদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ে যাতে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগটিও যেন থেকে গেছে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু ইত্তেফাককে বলেন, ‘অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে আমরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে মানবিক আচরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় যেন নীবর ভূমিকা পালন করছে।’