1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
June 16, 2025, 1:04 am

দোহা এখন আর্জেন্টিনার ‘কলোনি

  • প্রকাশিত : শনিবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
  • 185 বার পঠিত

 

গৌতম ভট্টাচার্যঃ এক একসময় ফুটবল পর্যটককে তীব্র দোটানায় পড়ে যেতে হচ্ছে। কোনটা বেশি তাজ্জব হয়ে সে দেখবে? মেসির জাদুগরি ? হাফ লাইন থেকে গ্রিজমানের অচঞ্চল নেতৃত্ব ? এগুলো দেখার জন্যই তো তার অমোঘ মাধ্যাকর্ষণে গাঁটের কড়ি খরচা করে দূর কাতারে উড়ে আসা ? নাকি তন্ময় হয়ে প্রত্যক্ষ করবে ফুটবল আর আর্জেন্টিনা ঘিরে ঘটতে থাকা আরব্য উপন্যাসের এক একটা রাত ?

পরেরটা তো হিসেবের মধ্যেই ছিল না। বরঞ্চ কাতার নামক রক্ষণশীল ইসলামিক সভ্যতার বুকে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া মানে সবাই জানতো একটা বিধিনিষেধের প্রিজমের মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখতে হবে। মানসচক্ষে সে মোটামুটি দেখে নিয়েছিল এত গোঁড়া জায়গা যে সাহসী পোশাক চলবে না।সন্ধ্যাহ্নিকের আইডিয়া ঝেড়ে ফেলতে হবে।এই কটা দিন কাটাতে হবে ফুটবল আশ্রমিকের জীবন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল দেখার বিনিময়ে সব রকম উচ্ছলতা এই ক’দিন ঝেড়ে ফেলতে হবে জীবন থেকে।ধরেই নিতে হবে নিছক ফুটবল বেঁচে থাকবে তার চিরপরিচিত হাইপার উত্তেজনাকে স্লাইডিং ট্যাকলে মাঠের বাইরে বার করে দিয়ে।

অথচ কাল রাত্তির দেড়টার সময় দোহা শহরের কেন্দ্রস্থলে শুক ওয়াকিফ বলে জায়গাটা থেকে প্রায় ধাক্কাধাক্কি করে মেট্রোয় উঠলাম।একটা সময় মনে হচ্ছিল ভিড়ের চাপে দমবন্ধ হয়ে যাবে। চিলচিৎকার চলছে জায়গাটায়।মনে হচ্ছে এই গ্রহের সেরা ফুটবল টিম আর ৫০ ঘন্টা বাদে যে লুসেইল স্টেডিয়ামে নির্ধারিত হবে শুক ওয়াকিফ বুঝি তার সাইড গ্যালারি। আসার সময় তাড়াতাড়ি পৌঁছতে চেয়ে ট্যাক্সি নিয়েছিলাম এবং সেটা নেদারল্যান্ডস-আর্জেন্টিনা ম্যাচের রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মতোই ভুল ছিল। আদ্ধেক রাস্তা যানজটে স্থবির।চালক ফরিদপুরের। সামনে দিয়ে বিশাল আর্জেন্টিনীয় সমর্থকদের শোভাযাত্রা আর পতাকা করে ছোট ভ্যান ঘুরছে দেখে বলল ,”দাদা ভয় লাগতেছে।ফ্রান্স কিন্তু দারুণ টিম। ”

মনে হচ্ছিল হায় , মেসিকে যদি কেউ ভিডিও করে দেখাত। দেশের সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ক’দিন আগে তিনি অঙ্গীকার করেছেন নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেবেন। কিন্ত তিনি যদি জানতেন, কত কোটি কোটি বিদেশী হৃদয় তাঁর জন্য অদৃশ্য গির্জা -মন্দির -মসজিদে প্রার্থনারত !এই যে মুখগুলো রাত দুটো আড়াইটাতেও তাদের হয়ে গাইছে -নাচছে ।অন্য দেশের পতাকা তুলে নিয়ে সম্মোহিতের মতো মার্চপাস্ট করছে। এরাও তো ক্যাপটিভ অডিয়েন্স।

বেসরকারি হিসেবমতো দোহা এসেছেন চল্লিশ হাজার আর্জেন্টিনীয়।কিন্তু এই যে উন্মাদনা বুয়েনস আইরেস থেকে ১৩৩০৬ কিলোমিটার দূর ভূখণ্ডে ঘটছে তা শুধু মেসির দেশের নাগরিকদের মধ্যে তৈরি সম্ভব নয়। এটা আর্জেন্টিনা ঘিরে বাকি পৃথিবীর একটা গরিষ্ট অংশের আকুলতা যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মারাদোনা-রাজে। মেসি তাকে নতুন সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শিখরের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন।লোকের যেন আর তর সইছে না। তারা যত দ্রুত সম্ভব মেসির হাতে কাপ দেখতে চায়। দেখতে চায় বিউগলের আওয়াজসমেত পূর্ণাঙ্গ এবং অভিজাত রাজ্যাভিষেক।

দেশ বিদেশ মিলে আপাতত আর্জেন্টিনীয় নাগরিকত্ব নেওয়া ফুটবল উৎসাহীদের কমন আশঙ্কা — ফ্রান্স এত সলিড টিম যে বিপক্ষ আবেগের এমন বৃহৎ সব হিমশৈলকে পাত্তা না দিয়ে জ্যামিতিক বুননে অভ্রান্ত থাকবে।কিলিয়ান এম্ব্যাপে তাঁর চিতা সদৃশ দৌড়ে টালমাটাল করে দেবেন ওটামেন্ডিদের। মেসিকে নিবিড় চক্রব্যূহে আটকে দেবে ফ্রান্স রক্ষণ।ঠিক যেমন ২০১৪ ফাইনালে করেছিল সোয়াইনস্টাইগারের জার্মানি।

বিপরীতমুখী আশা ,সেবার মেসির স্বপ্নে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য একটা হিগুয়েন ছিলেন।জুলিয়ান আলভারেজ কিন্তু হিগুয়েইন নন। আট বছর আগের ফাইনালে তিনি পাশে থাকলে একই ফল হত কিনা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না।মেসি নিজেও একেবারে অন্যরকম ভাবে নিজেকে ব্যবহার করছেন।প্রথম দশ পনেরো মিনিট জাস্ট হেঁটে বেড়াচ্ছেন কবির উদাসীনতা নিয়ে।বল পেয়ে হোল্ড করছেন না।এক টাচে ছেড়ে দিচ্ছেন কারো জন্য। তারপর হঠাৎ করে অফ দ্য বল মুভমেন্ট থেকে ভিড়ের মধ্যে মুক্তো তৈরি করে দিচ্ছেন।

এরকম সৃষ্টিশীল খেললে তাকে মার্ক করা খুব কঠিন।অন্তত দুজনকে তাহলে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। যা আজকালকার দিনে কেউ করে না। আর একটা স্ট্যাট দেখছিলাম কোনো একটা বছরে বিশ্বপর্যায়ের টুর্নামেন্টে মেসি শেষ দিকে বেশি বিপজ্জনক থেকেছেন তার হিসেব। প্রথম ৮০ মিনিট ১০ গোলে অংশগ্রহণ।৯০ প্লাস মিনিটে ২৫ গোলে যোগদান।কবেকার এই হিসেব কে জানে ?এবারে অবশ্য প্রথম ২৫/২৭ মিনিটের পর থেকেই তিনি ম্যাচ ঘোরাতে শুরু করছেন।অনুমান করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি ফাইনালে তিনি গোল পেলে লুসেইলের বাইরে কী কী ঘটতে পারে ? আরো একবার বলি একমাত্র মাঠ আর তাঁর এলাকা নয়। কাতারের জনজীবনে আর্জেন্টিনীয়দের এমন প্রভাব যে কোথাও কোনো দোকানে আর্জেন্টিনার মেমেন্টো নেই। সব বিক্রি হয়ে গ্যাছে।না আছে জার্সি না মাফলার। ব্রাজিল পাবেন।ফ্রান্স পাবেন।জার্মানি পাবেন।কিন্তু নো আর্জেন্টিনা।তেল আর গ্যাসের বাইরে কাতারের বাণিজ্যে মেসিদের এইরকম অংশগ্রহণ থাকবে কে জানতো ? স্থানীয় মুদ্রা রিয়ালের হিসেবে বাণিজ্যের পরিমান ছেড়ে দিচ্ছি।কিন্তু প্রভাব দেখে মনে হচ্ছে অন্তত ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত দোহা আর্জেন্টিনার ‘কলোনি’ হয়ে গিয়েছে। যেমন ১৯৭১-র আগে দেশটা ছিল ব্রিটিশ অধীনে।

রক্ষণশীল ইসলামিক দেশ। তারা বিশ্বকাপের আয়োজন করছে বলে কত বিতর্ক। কত সমালোচনা। সেই জুরিখের মহাবিতর্কিত বৈঠকে কাতারের কাপ-সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়া থেকে শুরু হয়েছিল।কী চমৎকার ভাবেই না কাতার জবাব দিল। পর্যটকদের জন্য বাস ফ্রি।মেট্রো ফ্রি।স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২৫ ডিসেম্বের অবধি যাতে বাড়তি ট্রাফিক না থাকে।সরকারি অফিস মাত্র চার ঘন্টা করে। প্লাস এই যে পাঁচটা ক্রুজকে খাঁড়িতে দাঁড় করিয়ে সেগুলোকে হোটেলের মতো ব্যবহার করা। অন্তত পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার মানুষ এতে জায়গা পেয়ে গেলেন।কলকাতার আইটি নক্ষত্র তন্ময় বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে এরকমই একটা ক্রুজে এমসিএস ওয়ার্ল্ড ইউরোপা-তে গিয়ে দেখলাম দুর্ধর্ষ ব্যবস্থা।ক্রুজেই সিনেমা হল। ডিস্ক।স্পেশালিটি রেস্তোরাঁ। সুইমিং পুল। সেখানে উদ্ভিন্নযৌবনা সুন্দরীদের জলকেলির মাঝেও আর্জেন্টিনীয় সমর্থন। মেসি ও মারাদোনার পোস্টার। তন্ময় ছাড়াও ক্রুজে একাধিক বঙ্গসন্তান রয়েছেন। ফুটবল কর্তা সুব্রত দত্ত। ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্ণধার অভিজিৎ দাস। আগরতলায় আইটি পৃথিবীর খুব পরিচিত নাম কমল নাথ – তিনিও চলে এসেছেন বিশ্বকাপ ভ্রমণে।

বিশ্বকাপ দেখতে আগেও দূর দেশে বাঙ্গালি আগমন ঘটেছে।কিন্তু এইরকম ঝাঁকে ঝাঁকে বাঙ্গালিকে বিশ্বফুটবল মঞ্চে আগে দেখিনি। সৌরভ ফাইনাল দেখতে আসছেন জেনে স্থানীয় বঙ্গীয় পরিষদের পক্ষে জয়তী মৈত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরিষদের অন্য কর্তাদের সঙ্গে এখন উদ্যোগে যে কী করে সৌরভকে সংবর্ধিত করা যায় ? আদৌ যাবে এত কম সময়ে? কল্যাণ চৌবেও আসছেন আজ-কালের মধ্যে। গোটা ক্রীড়া বিশ্ব যেন এখন কাতারে হাজির।

এবং তার মধ্যে বাংলায় অংশগ্রহণ কিন্তু কম নয়। মধ্য রাতে শুক ওয়াকিফে দেখলাম কুনাফা নামক মধ্যপ্রাচের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানে বিশাল লাইন।সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন মেসির একটা ম্যাচ দেখেছেন। সঙ্গে থাকা তাঁর পুত্র রৌনক আবার ওই ভিড়ে আর্জেন্টিনার জার্সির খোঁজে। অশেষ পাল – শিবপুরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ারও সেখানে।অশেষ প্রায় দেড়শো টিকিট বিলি করেছেন বাংলা থেকে আসা তাঁর বন্ধু ও প্রাক্তন শিবপুরীদের। এঁদের সঙ্গে ভিড়ে পেলাম কলকাতার ব্যবসায়ী অভিরূপ নাগচৌধুরী আর অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলালের কর্ণধার স্বর্ণালী – আশিস ও ঘুরে বেড়াচ্ছেন শুক ওয়াকিফে। লক্ষ্য আর্জেন্টিনার টুপি কেনা। কিন্তু কোথায় পাবেন? সব শেষ!

শুক্রবার সকালে আর এক দঙ্গল বাঙালির সঙ্গে দেখা।প্রাক্তন সিএবি সচিব সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। ব্রেকফাস্টে উল্টোদিকে প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কর্তা প্রদীপ সেনগুপ্ত আর চিরকালের ফুটবল পর্যটক ব্যবসায়ী কংসারি কয়াল। এঁরা আবার আজ গাড়ি নিয়ে সৌদি বর্ডারে চলে গেলেন। কাল থেকে তো আর সময় পাবো না বলে। কিন্তু ফাইনাল তো কাল নয় -পরশু।

তাহলে ? ওই যে বললাম তর সইছে না। ডিটিডিসি মহাকর্তা শুভাশিস চক্রবর্তীও যাবতীয় কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে কাতারে পড়ে আছেন। তুঙ্গস্পর্শী ব্যস্ততা থাকে তাঁর সারাবছর। কিন্তু ফুটবল আর মেসি কী করে অপেক্ষা করে ? তাই এখন কিছুদিন ছেলের হাতে ব্যবসার ভার।

মেসি যদি জানতেন ওই কালজয়ী গানটার কথা — ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।’

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park