ডেস্ক : বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় বুধবার। এর মধ্যে হঠাৎ আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। যিনি ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ তার আগে বুধবার বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দুই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর উল্লেখ করেন, ‘হাজারও ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’
স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্ম; পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের করুণ পরিণতির পর ২০২৪ সালে ৬৩ বছর বয়সী বাড়িটি ঘিরে জন্ম নেয় নতুন এক ইতিহাস। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে ভাঙচুর-আগুনের পর বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতিবেদক এবং সারা দেশের প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ধানমন্ডির বাড়ি নয়, বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনেও। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ভোলা ও পিরোজপুরে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামফলক। এককথায় টানা ১৬ বছরের দম্ভচূর্ণ থেকে চূর্ণবিচূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সারাদেশের আওয়ামী সাম্রাজ্য।
শেখ মুজিবের বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ:
ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। সেই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে (বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ। পরে একটি ক্রেন, একটি এক্সকাভেটর ও দুটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি।
কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা বাড়িটি যেন এক মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ক্ষুদ্র একটি অংশ এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির আশেপাশে থাকা বাকি স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ধসে পড়া ছাদ ও রেলিংয়ের ভাঙা অংশ থেকে বেরিয়ে আসা রড সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কেউ আবার হাতুড়ি পিটিয়ে ধসে পড়া ছাদ ভাঙার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এখানে-সেখানে পড়ে থাকা লোহার রড ও ইস্পাতের অংশ কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার রাত ৮টার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাত্র-জনতার ভিড়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা গেট ভেঙে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ভেতরে ঢুকে শুরু করে ভাঙচুর। কেউ কেউ লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে অংশ নেন। কেউ কেউ আবার জানালার গ্রিল, কাঠের ফ্রেম ও ফটকের অংশবিশেষ ভেঙে নিয়ে যান।
এ সময় পুরো এলাকা বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত থাকে। ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই কর’- ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায়।
ভেতরে যখন ভাঙচুর চলছে তখন ভবনটির বাইরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের কেউ কেউ বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছিলেন, অনেকে মোবাইলে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে রাখছিলেন।
সুধাসদনে আগুন:
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ভবনটিতে যখন ভাঙচুর চলছিল ঠিক তখন আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডির ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে কয়েকজন তরুণ এসে তালাবন্ধ সুধাসদনে আগুন লাগিয়ে দেয়। যদিও ৫ অগাস্ট সুধাসদনে এক দফা হামলা হয়। এরপর সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তালা মেরে যান। বুধবার রাতে সেই তালা ভেঙে আগুন লাগানো হয়।
কয়েক ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও দমকল বাহিনীকে সেখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে অবস্থান নেন।
গণভবনে অবস্থানকালে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসতেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমল জুড়ে বাড়িটির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকত।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ অফিসকে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ অফিসের পরিত্যক্ত ভবনটিতে অগ্নিসংযোগ করে এ ঘোষণা দেয় তারা। পরে রাত ১১টার দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়।
নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ এবং জেলা আদালতের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের ম্যুরালটি প্রথমে ভাঙা হয়। এরপর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের ম্যুরালটিও ভাঙা হয়। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কর্নারেও ভাঙচুর করে বিএনপির লোকজন।
রংপুর:
রংপুরে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা ম্যুরালে লেখা মুছে দিয়েছেন।
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে স্থাপনার নাম মুছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে বিজয় ২৪ হল নামকরণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নাম মুছে দিয়ে ‘মুক্তমঞ্চ’ নাম করেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, রাত ১০টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ফলক মুছে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা হলটিকে বিজয় ২৪ বলে ঘোষণা দেন।
খুলনা:
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। রিকশা-ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে করে ওই বাড়ির ইট ও রড খুলে নিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়।
এর আগে নগরীর ২৩ শেরেবাংলা রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে দুটি বুলডোজার নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে বাড়ির ভেতরের অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা।
বুধবার মধ্যরাতে বুলডোজার দিয়ে এটি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরীর দোলখোলা মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতা দেলোর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে বাড়ির গেট ও বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা:
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরায়ও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে জেলা শহরের খুলনা রোড মোড়ে জড়ো হয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ম্যুরালটির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান। তারা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা খুলনা রোড মোড়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটির অপসারণ শুরু করেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদ চত্বর এবং সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
যশোর:
যশোর জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ, যশোর পৌরসভায় নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও মনিহার এলাকায় বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরসহ অন্তত ৮টি নামফলক ভাঙচুর করেছে ছাত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
বুধবার রাত ১০টার দিকে প্রথমে কয়েকজন ছাত্ররা এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলে। ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে করে ২৫-৩০ জন যুবক সেখানে আসে। এরপর তাদের হাতে থাকা লোহার পাইপ, হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে।
এরপর তারা জেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভেঙে ফেলে। পরে তারা যায় পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে উদ্বোধক হিসেবে থাকা শেখ হাসিনার নামফলক ভাঙচুর করে।
এ সময় তারা যশোর পৌরসভা চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্ধেক ভাঙা ভাস্কর্যটিও পুরোপুরি ভেঙে ফেলে দেয়। ভেঙে ফেলা হয় যশোর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অফিসের উদ্বোধনী নামফলকও। পরে একে একে তারা শহরের অন্তত ৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা শেখ হাসিনার নামফলক ও মুক্তিযুদ্ধের ‘বিজয় স্তম্ভে’ থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও নামফলক ভেঙে দেয়।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সদর উপজেলা চত্বরে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এছাড়া বুলডোজার দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এরপর তারা মিছিল নিয়ে শহরের পৌরসভার মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানেও শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ভবনের ভেতরে ঢুকে শেখ হাসিনার ছবিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের ছবি ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ও জেলা পরিষদ চত্বরে যান। সেখানেও শেখ মুজিবের ম্যুরালে ভাঙচুর চলে।
চট্টগ্রাম:
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এবং কোতোয়ালি থানার জামালখান এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিন রাতে চমেক হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় মিছিল থেকে হাসপাতাল এলাকার একটি ভবনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নগরের জামালখান এলাকায় একটি মিছিল থেকে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
কুমিল্লা:
সারাদেশে বুলডোজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নগরীর মুন্সেফে অবস্থিত বাহারের তিনতলা বাড়িতে হামলে পড়েন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময় বাহারের বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা। তবে বুলডোজার বা অন্য কোনো মেশিন না থাকলেও হাতে থাকা শাবল, লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে অকটেন ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বাহারের বাড়িটিতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলেজের প্রধান ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দক্ষিণ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে ভাঙা হয়।
নোয়াখালী:
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে হামলা চালান তারা।
নাটোর: নাটোর সদর আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন জান্নাতি প্যালেসে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
বরিশাল:
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কালীবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনের সামনে বুলডোজার নিয়ে আসে ছাত্র-জনতা। রাত সোয়া ১টার দিকে বুলডোজার চালিয়ে ভাঙা শুরু করে তারা।
ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর বরিশালের বাসভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ২টার দিকে ভবনটি ভাঙা শুরু করে ছাত্র-জনতা। তার আগে দেড়টার দিকে বুলডোজার ও মিছিল নিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
ভোলা:
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে বাড়িটিতে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ জনতা।
বুধবার রাত পৌনে ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে অবস্থিত তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
পিরোজপুর:
বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানান তারা। রাত ১২টার দিকে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার ভাই পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে রাত ১টার দিকে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের মালিকানাধীন একটি ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। এ সময়ে তাদের আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
পটুয়াখালী:
পটুয়াখালীতে জেলা পরিষদের সামনে ও র্যাব ক্যাম্প-সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি পৃথক ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থী ও জনতা। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সিলেট:
সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরালের স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্রজনতা।
বুধবার দিবাগত রাতে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ম্যুরাল দুটির স্থাপনা সম্পূর্ণরুপে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন ছাত্র-জনতা।
পাবনা:
পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতব্যাপী এসব ঘটনা ঘটে।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মিত বিদ্বেষ ছড়ানো ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।