মোশাররফ হোসেন : কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জোসেফ আর বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিয়েছেন । ক্যাপিটল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের সময় দুপুর ১২টার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রথমবারের মত মহিলা উপ রাষ্ট্রপতি কামালা হ্যারিসকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জি রবার্টস শপথ পাঠ করান । যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে ১৯৩৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান হয়েছিল । নীল পতাকা ধারি ডেমোক্রাটিক পার্টির হলো শুরু , লাল পতাকাধারি রিপাবলিকান পর্টির হলো সাড়া ।
রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন শপথ গ্রহনের পর তার বক্তিতায় বলেন , এ মূহুর্তে গণতন্ত্রের জয় হলো । আমাদের সকলকে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে হবে । আমি সকলের রাষ্ট্রপতি । যুক্তরাষ্ট্রে কোন বিভেদ নয় , ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে । কেননা ঐক্য দ্ধারাই আমরা বড় কাজ করতে পারব । যুক্তরাষ্ট্রকে সবাই মিলে এগিয়ে নিতে হবে ।
করোনা মহাদূর্যোগের মধ্যে জমকালো না হলেও বাইডেনের অভিষেক অনুষ্টানে কোভিড ১৯ এ মৃত্যু বরনকারিদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয় । শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হাজারখানেক আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতে ঘন্টাব্যাপি অনুষাঠান ছিল অনাড়ম্বর।এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ , বিল ক্লিনটন , বারাক ওবামা , উপ রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্স, স্পীকার পেলোসি সহ বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নর ,সিনেটর,প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য , হোয়াইট হাউস প্রশাসন কর্মকর্তা অংশগ্রহন করেন । অনুষ্ঠানে উপ রাষ্ট্রপতি কামালা হ্যারিস ,সিনেটর রয় ব্লান্ট , এমি ক্লুবুচার (মিনোসোটা ) বক্তৃতা করেন। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত তারকা লেডি গাগা,জেনিফার লোপেজ সংগীত পরিবেশন করেন ।
কিন্তু বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর নিরাবত্তাবলয় তৈরি করে সেনা সদস্য ,এফ বি আই , ন্যাশনাল গার্ড, পুলিশ সদস্যরা । হামলার আশংকায় ওয়াশিংটন ডিসি জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হয় । ক্যাপিটল হিল এলাকায় দেয়া হয় লকডাউন । গত ৬ জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের সহিংস হামলায় ক্যাপটল হিলে পুলিশের সংগে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছিল । এরপর অভিষেক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা গ্রহন করে ন্যাশণাল গার্ড । ১৯ জানুয়ারি তারা চলে গেলে সেনা , এফ বি আই ও পুলিশ অবস্থান নেয় ক্যাপিটল হিলে । বন্ধ করে দেয়া হয় ওয়াশিংটন
অভিমুখি সকল ট্রেন সার্ভিস । অবশেষে কোন দুর্ঘটনা ছাড়া নিরাপদে শেষ হয়েছে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান । যুক্তরাষ্ট্রের জনগন ও বিশ্বের গনতন্ত্রকামী মানুষের জয় হলো ।
বাইডেনের ১৫ আদেশে সই
সূচনা দিনে ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি বাইডেন । যার মধ্যে রয়েছে জতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক কমিটিতে ফেরা , ইরানসহ ৬টি মুসলিম দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফেরা, ভিবাসিদের নাগরিকত্ব প্রদান,করোনা টিকা প্রদানে কার্যকর ১০০দিনের কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য।
ট্র্যাম্প কি করে গেলেন
ক্যাপিটল হিলে যখন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ঢেউ ও আনন্দধারা বইছিল তখন তাতে অংশ না নিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেন একই মেয়াদে দুইবার ইমপিচ হওয়া রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্র্যাম্প। তার বিদায়ী বক্তব্যে ট্র্যাম্প বলেন , এ বিদায় সাময়িক । আবার ফিরে আসবো । তার সমর্থকরা তাকে দলীয় লাল পতাকা নেড়ে বিদায় জানান আন্ড্রু বেইজ এলাকায় ।এরপর রিসোর্টে গিয়ে গলফ খেলেন । দেড়শতাধিক অপরাধিকে ক্ষমা করে যান ।
ট্র্যাম্প তার মেয়াদে বর্ণবাদ উস্কে যুক্তরাষ্ট্রেকে ভিবক্ত করেন। অভিবাসি সন্তানদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার আইন করেন । নির্বাচনে পরাজয় না মেনে সুপিম কোর্টে যান । এমন কি ক্যাপিটল হিলে প্রতিনিধি পরিষদের সভাস্থলে রিপাবলিকানদের বিক্ষোভ করার আহবান করে হামলায় উস্কানি দেন । সৌদি বাদশাহ সুলেমানের মাধ্যমে সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার পর তুরস্কের প্রমাণাদি সত্তেও তার বিচার করতে বাধা দেন। ইরানসহ ৬টি মুসলিম দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ।
করোনা মহাদূর্যোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহাযতা না করে বেরিয়ে এসে মানবতার ক্ষতি করেন। বিশ্ব মানবতার সহায়তায় দ্রুত টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্রেকে নেতৃত্বে রাখতে ব্যার্থতার পরিচয় দেন । তার অযোগ্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪ লক্ষাধিক মানুষ করোনায় মারা গেছে । মাস্ক ব্যাবহার না করে তাকে মৌলবাদীদের মুখোশ বলেছেন ।
নিজ প্রশাসন হোয়াইট হাউসে কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে নিয়মিত চাকুরিচ্যুত করেন ।সবশেষে উপ রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্সকে নির্বাচনের ফলাফল স্বীকৃতি প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, জর্জিয়ার গভর্ণরকে ফলাফল পরিবর্তনে চাপ সৃষ্টির করে সারা গণতান্ত্রিক বিশে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তলানিতে পৌছে দেন ।