দূরবীণ ডেস্ক: মহাজাগতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে সূর্যগ্রহণ একটি। বর্ণিল এই ঘটনার ফলে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সাধারণত আমরা দুই ধরনের গ্রহণের কথা জানি- চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহণ। কিন্তু তৃতীয় আরেক ধরনের গ্রহণ রয়েছে যেটি ঘটে অনেক দূরের দুটি তারার মধ্যে। সূর্যগ্রহণ আবার কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ধরনগুলো ভেদে পৃথিবীতে এর প্রভাবও আলাদা হতে পারে।
আগামী ৮ এপ্রিল বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। এদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্বের কিছু অঞ্চলে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলবে চাঁদ। ফলে দিন হবে রাতের মতো অন্ধকার। এই গ্রহণের সময় পৃথিবীতে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটতে পারে।
সূর্যগ্রহণের ফলে পৃথিবীতে যেসব পরিবর্তন ঘটে
তাপমাত্রা হ্রাস
গ্রহণ যতই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবে আকাশের উজ্জ্বলতা তত ম্লান হয়ে পড়বে। বাতাস শীতল হয়ে উঠবে।
আর তাই সূর্যগ্রহণ দেখতে (অবশ্যই খালি চোখে নয়) বের হওয়ার সময় সঙ্গে একটা জ্যাকেট রাখতেই পারেন!
চাঁদ সূর্যকে ঢেকে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে। তাপমাত্রা কতটা কমে যাবে সেটা নির্ভর করে অবস্থান, বছরের সময় এবং গ্রহণের ধরনের ওপর।
বেশিরভাগ জায়গায় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় তাপমাত্রা ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২.৮ থেকে ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কমে যায়। কখনো কখনো এটি আরও বেশি হতে পারে।
বাতাসের দিক বদল
তাপমাত্রা হ্রাসের পাশাপাশি যে অঞ্চলগুলি গ্রহণ লক্ষ্য দেখা যায় সেখানকার বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।
প্রথমত, চাঁদ সূর্যকে আটকে দেয়ার কাছাকাছি সময়ে চলে এলে বাতাস তার শক্তি হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, চাঁদ যখন সূর্যের সম্পূর্ণ সামনে চলে আসে তখন বাতাস আবার উপরে উঠতে শুরু করে এবং প্রায়শই ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। আর বাতাসের এমন প্রবণতা সব ধরনের সূর্যগ্রহণের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়।
প্রাণীদের অদ্ভুত আচরণ
প্রাণীরাও সূর্যগ্রহণে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মৌমাছিরা গুঞ্জন বন্ধ করে দেবে। পাখিরা শিস বাজাবে না। পোকামাকড় কিচিরমিচির শুরু করবে।
কিছু পোষা প্রাণী অস্বাভাবিক আচরণ করবে। আচরণে বুঝা যাবে, তারা বিভ্রান্ত।
দিনের মাঝখানে যখন আকাশ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেলে প্রাণীদের বিভ্রান্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক! সন্ধ্যার প্রাণীরা যেমন- ঘুরঘুরে পোকা এবং ঝিঁঝিঁপোকারা তাদের সান্ধ্য গান শুরু করে দিতে পারে। গরু এবং ঘোড়ারা রাতের নিদ্রার প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারে আর পাখিরা ফিরতে শুরু করবে তাদের নীড়ে।
গাছপালার ওপরও সূর্যগ্রহণের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ২০১৭ সালে সূর্যগ্রহণের পর বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেন যে, গাছেরা সালোকসংশ্লেষণ এবং পানি হ্রাসের হার কমিয়ে দিয়েছিল। যদিও এই হার রাতে যেমনটা ঘটে তার তুলনায় অনেক কম।
এমনকি অতি ক্ষুদ্র অণুজীবগুলিও সূর্যগ্রহণের অদ্ভুত কম্পনের জন্য সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। ২০১১ সালে ভারতে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির একটি গবেষণায় দেখা যায়, গ্রহণ শিখরে পৌঁছনোর সময় ল্যাবের পাত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলি ছোট এবং ভিন্ন আকারের হয়ে উঠেছে।।
বেতার তরঙ্গে প্রভাব
পূর্ণগ্রাস এবং বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় কিছু নির্দিষ্ট রেডিও তরঙ্গ ফ্রিকোয়েন্সি বিঘ্নিত হতে পারে। কিন্তু কেন এমনটা ঘটে তা নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞাদের সন্দেহ, সূর্য পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ারের সাথে যেভাবে মিথস্ক্রিয়া করে তার সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে, যা সৌর শিখা এবং সৌর ঝড়ের মতো জিনিসগুলির প্রতিক্রিয়াতে ওঠানামা করে।
অদ্ভুত ছায়াএকটি গ্রহণ যখন ঘটে তখন স্বাভাবিকভাবেই সবার চোখে আকাশের দিকেই থাকে। কিন্তু আপনি একটু সময় নিয়ে মাটির দিকে তাকান- গাছ এবং অন্যান্য বস্তুর ছায়ার দিকে লক্ষ্য করুন; একটি ‘পিনহোল’ প্রভাব সৃষ্টি করে তা ক্ষুদ্র অর্ধচন্দ্রাকারে ঢেকে যাবে। বয়লগ্রাস সূর্যগ্রহণের চূড়ান্ত সময় আপনি সর্বত্র আলোর ছোট বলয় দেখতে পাবেন। এই ধরনের ছায়া আংশিক সূর্যগ্রহণের সময়ও দেখা যায় এবং এগুলো দেখতে বেশ চমৎকার হয়।
গ্রহণ তার পিকে পৌঁছানর কয়েক সেকেন্ড আগে, এক রঙা পৃষ্ঠে আলো-আধারির ঢেউ খেলানো স্ট্রাইপ দেখা যেতে পারে। যা অনেকটা সুইমিং পুলের নীচে থাকার মতো।
সূত্র: লাইভ সাইন্স