মোশাররফ হোসেন: ২০বছর পর বিনা বাধায় তালেবান মুজাহিদিনের দখলে চলে গেল আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সহ ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান পুরোপুরি ত্যাগের আগেই তালেবানরা কাবুলের দখল নিযেছে। রয়টার্স জানায, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান কাবুল বিমান বন্দর ত্যাগের সময ৭জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। এসময় শত শত আফগান নাগরিক বিমানে উঠে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করে। পড়ে গিয়ে গুরুতর আহতরা মারা গেছে ।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেনট আশরাফ ঘানি ও ভাইস প্রেসিডেনট আমানুল্লা সালেহসহ বিমানে করে তাজিকিস্তান হয়ে ওমান পালিইয়ে গেছেন। তবে ওমান থেকে তারা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন বলে আল জাজিরাসহ বিভিন্ন মিডিয়া সুত্রে জানা গেছে।
ইতিপূরবে আফগানিস্তানে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আলী আহমেদ জালালীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন প্রেসিডেনট আশরাফ ঘানি।
এদিকে এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডেকেছেন। তালেবান মুজাহিদিনরা বিভিন্ন সাধারণ যানবাহনে চড়ে কাবুলে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান নেয়। তারা প্রেসিডেনট প্রাসাদ দখল করে নিয়েছে । আল জাজিরা, সিটিভি, সিপি২৪, সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এ খবর জানিয়েছে।
১৯৮০সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহয়োগিতা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করে বাবরাক কারমাল সরকার উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল তালেবান মুজাহিদিন নেতা মোল্লা ওমর। ২০০১সালের ১১সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সহয়োগিতায় তালেবান সরকারের পতন ঘটে। মোল্লা ওমর পালিয়ে যান। ২০১৩সালে মোল্লা ওমর মারা গেলে হাইবাতুললাহ আখুনজাদা নেতা নির্বাচিত হন। ২০১৬সালে ডোরোন হামলায় মোল্লা মনসুর মারা যান। ৬০বছরের আখুন সামরিক প্রধান। মোল্লা ওমরের ছেলে ৩০বছরের মোল্লা ইয়াকুব আখুনজাদাকে নেতা করেন।সিরাজউদদিন হাককানি, আবদুল হাকিম হাককানি তালেবান মুজাহিদিনের পরিচালনা করেন।
সর্বোপরি আফগানিস্তানের অন্তবর্তী সরকার প্রধান আলী আহমেদ জালালী সাবেক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। তিনি মেরিল্যান্ডে বসবাস করতেন। ২০০৩ সালে আফগানিস্তান ফেরেন। ২০০৪-০৫ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। তবে আফগানিস্তানের নাগরিকদের আধিক অংশ দেশত্যাগ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। পার্শবরতী দেশে ছুটছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস আফগানিস্তানের কিছু নাগরিক আশ্রয় দেবার অনুরোধ করার পর বাংলাদেশ নাকচ করেছে। বিশেষ করে তালেবান মুজাহিদিনের যোগসূত্র রয়েছে বলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন মিডিয়াকে জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া জানিয়েছে, কাবুল বিমান বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর বিমানের বাইরে উঠে পড়া ৭জন পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
জো বাইডেনের বক্তব্য
এদিকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন জাতির উদ্দেশ্যে বক্তিতা দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনও আফগানিস্তানে জাতি গঠনে কাজ করেনি। তবে অন্তর্ঘাত থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট ছিল। সব পক্ষের বৈঠক শেষে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সকলকে ফিরিয়ে এনেছে। বছরে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হত ১৫হাজার মিলিয়ন ডলার । এটা অননো খাতে কাজে লাগবে। আর আফগানিস্তানের জনগণকে সহয়োগিতা করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী কাজ।
তালেবান মুজাহিদিনের নেতা আখুনজাদা
অপরদিকে তালেবান মুজাহিদিনের নেতা আখুনজাদা বলেছেন, আশরাফ ঘানি দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ায় যুদ্ধ শেষ। এখন সকলের সংগে কথা বলে সরকার গঠনের উদ্যোগ নেযা হবে। এ বিষয়ে কাতারের দোহায আজ মজলিস বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেযা হবে । অন্তবর্তী সরকার গঠন করবে না।
কাবুল বিমান বন্দর নিরাপত্তায় আবার সেনাদল
কাবুল বিমান বন্দর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ১০০০ ও ইংল্যান্ড ২০০ সেনা পাঠাচ্ছে। মূলত সব পক্ষের বৈঠক শেষে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠনে জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কাজে যুক্তরাষ্ট্র সহয়োগিতা করতে আগ্রহী। পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন যার মূল লক্ষ্য।
জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশন
পাকিস্তান ও চীন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তালেবান মুজাহিদিনের আফগানিস্তানে প্রবেশকে দ্রুত সমর্থন করে বিশ্বকে চমকে দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস এক বিবৃতিতে তালেবান মুজাহিদিন নেতাদের সকল পক্ষের বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেযার পরামর্শ দিয়েছেন আবার বৃটেনসহ ৬৫টি দেশ পৃথক পৃথক ভাবে বিবৃতিতে একই আহ্বান জানিয়েছে।