ইউরোপিয়ান ফুটবল বনাম লাতিন ফুটবল। পাওয়ার ফুটবল বনাম সুন্দর ফুটবল। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও যখন খেলার ফল হয়নি তখন ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে। লিওনেল মেসির পায়ের জাদু আর গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজের চুম্বক হাতে শেষ হাসি আর্জেন্টিনার।
লুসাইল স্টেডিয়ামে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। ১২০ মিনিটের খেলায় ২-২ গোলে সমতা হওয়ার পর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আলবিসেলেস্তেদের জয় ৪-৩ গোলে।
অথচ টাইব্রেকারে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। সেটিই করে দেখালেন নেদারল্যান্ডসের বেগহোর্স্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তাদের হয়ে কথা বলেনি।
৩২ মিনিটে ডি বক্সের একটু সামনে থেকে মেসির যাদুমাখা পাসে প্রথম গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের একটু সামনে থেকে ডিফেন্সচেরা পাস দেন মেসি। দৌড়ে এসে ফন ডাইকের আগেই আলতো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন ডিফেন্ডার মোলিনা।
১ গোলে স্বস্তিতে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতি থেকে ফিরে ৭৩ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা। ডি ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির অসাধারণ শটে ব্যবধান হয় ২-০।
আর্জেন্টিনা যখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর খেলার বাকি আর ৭ মিনিট তখন শুরু করেন ডাচরা। ডান দিক থেকে এক ক্রসে দুর্দান্ত হেডে মার্টিনেজকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন বেগহোর্স্ট।
সমতাসূচক দ্বিতীয় গোলটি আরও অবিশ্বাস্য। যোগ করা সময়ের তখন মিনিট খানেকও বাকি নেই। উড়িয়ে ফ্রি কিক না নিয়ে নিচু শট নেয় ডাচরা। ডি বক্সে বল পেয়ে মার্টিনেজকে আবারও ফাঁকি দেন বেগহোর্স্ট। প্রাণ ফিরে পায় নেদারল্যান্ডস।
একই দিন দ্বিতীয় কোয়ার্টারফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। দুটিতেই প্রথম নেওয়া শট মিস করা দল হারে। ব্রাজিলের রদ্রিগো প্রথম শট মিস করেন, ব্রাজিল আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। অন্যদিকে এই ম্যাচে অভিজ্ঞ ফন ডাইকের গোল সেভ করে দেন মার্টিনেজ। শুধু তাই নয় দ্বিতীয়টিও মিস করেন বার্গুয়েস। অসাধারণ গোল বাঁচিয়ে দনে মার্টিনেজ! শেষ পর্যন্ত এই মিসের খেসারত দিতে হয়েছে ডাচদের। আর্জেন্টির একটি মিস করেন ফার্নান্দেজ। কিন্তু মার্টিনেজের দুই সেভের বদৌলততে কপাল খুলে যায়।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর্জেন্টিনারই একমাত্র রেকর্ড,যারা সবচেয়ে বেশিবার টাইব্রেকারে জিতেছে। ৬ বার খেলে ৫বারই জয় আকাশী নীলদের। অন্যদিকে ডাচরা ৪বার খেলে মাত্র ১বার জিতেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপেও টাইব্রেকারে মেসিদের কাছে হেরেছে ডাচরা। এবারও তার পুনরাবৃত্তি।
দুই দলই মেতেছিল লড়াইয়ে। এই ম্যাচে ১৫টি কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি। এটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ডের ম্যাচ। চলতি বিশ্বকাপেই জার্মানি-ক্যামেরুন ম্যাচে কার্ড দেখানো হয়েছিল ১৪বার। যারমধ্যে দুটি ছিল লাল কার্ড।
এই ম্যাচে একটি দারুণ রেকর্ডও গড়েন মেসি। দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১০ গোল দিয়ে ছুঁলেন কিংবদন্তি বাতিস্তাকে। এবার মেসির সামনে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পালা। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে হারানো প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। মঙ্গলবার এই বাধা পেরোতে পারলে মেসিরা চলে যাবেন ট্রফি জয়ের শেষধাপে।