ক্রীড়া সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছে দেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।’
মঙ্গলবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এবং সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ‘সাংবাদিকদের বাপের জুতা পরা ছবি নিয়ে ফেডারেশনে আসতে হবে’- এমন মন্তব্য করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়া শুরু করেন বাফুফে সভাপতি।
সালাউদ্দিনের এমন মন্তব্যের পর সারা দেশেই সমালোচনার জোয়ার ওঠে। বিশেষ করে সাংবাদিক সমাজ এখন ফুঁসে উঠেছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রায় সবাই বাফুফে সভাপতির পদ থেকে সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।
আজ বুধবার বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ উল আলম চৌধুরী ও মহাসচিব দীপ আজাদ সাংবাদিকদের নিয়ে কাজী সালাউদ্দীনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন। সে সঙ্গে অবিলম্বে কাজী সালাউদ্দীনের পদত্যাগের দাবি জানান তারা। নাহলে, সারাদেশের ফুটবল সংগঠকদের প্রতি তাকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
বিএফইউজের দফতর সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের ফুটবল সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, তাদের পরিবারকে জড়িয়ে এ বক্তব্য দেয়ার পর বাফুফে সভাপতির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসী সন্দিহান হয়ে পড়েছে। কাজী সালাউদ্দিন দায়িত্ব পালনকালে দেশের এই খেলার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা প্রায় সবার নিচে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাফুফে। যার সাম্প্রতিক প্রমাণ ফিফার নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন সময়ে এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার সর্বশেষ মন্তব্যে। দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পর বাফুফে সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করে বিএফইউজে। ‘
সিনিয়র সহসভাপতি এবং সহ-সভাপতিদের সঙ্গে আলাপে সালাউদ্দিন মন্তব্য করা শুরু করেন এভাবে, ‘সাংবাদিকরা এখানে (বাফুফেতে) ঢুকতে গেলে তাদের আমার এখানে তাদের বাপ-মায়ের ছবি দিতে হবে। আরেকটা শর্ত হলো তার বাবার ছবি পাঠাবে, জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি)? এটা হতে হবে মেন্ডেটরি (বাধ্যতামূলক)। বাবার জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।’
একই সময় সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদকে বলতে শোনা যায়, আমার রিকুয়েস্ট হচ্ছে অন্য। কে আন্ডারওয়্যার পরে বড় হয়েছে আর কে হয়নি সেটাও দেখতে হবে।’ সালাউদ্দিন এবং কাজী নাবিলের এই কথোপকথন রেকর্ড করে নেন কোনো এক সাংবাদিক এবং সেটা প্রকাশ করে দেন।
সাংবাদিকদের নিয়ে চরম অপমানমূলক কথা বলার পর ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে ক্ষমা চান সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে নিউজ দেখছি, সাংবাদিকদের কষ্ট দিয়ে আমি কিছু বলেছি। তবে আমি সাংবাদিকদের কষ্ট দেয়ার জন্য কিছু বলিনি। আমি নাবিলের সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে মজা করছিলাম। আমাদের এই কথা যে কেউ রেকর্ড করছিল সেটা আমি জানতাম না।’
‘আমি এই কথায় যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাই। আমি আপনাদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি। এটা আমার ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল। সেখানে রেকর্ডার ছিল এটা আমি জানতাম না।’