শ্যাম সুন্দর ঘোষ: বিশ্বকাপের একটি আসরে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স কোন বাঙালি ক্রিকেটারের? স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকে সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম করবেন। তবে বাঙ্গালি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরমেন্স প্রতিটি বাঙালি ক্রিকেটারকে ভালো খেলার জন্য উদ্দীপ্ত করবে। আটটি ম্যাচে সাকিবের রান ৬০৬। এর মধ্যে দুটি শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরান। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের বাঙালি ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত হতে ভালোবাসেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে খেলোয়াড়টি নিজেও জানেনা, তার অবসর ম্যাচটা কোথায় হবে। আজ কানপুরে ভারত ও বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে সাকিব জানিয়েছেন তার অবসর ম্যাচটা দেশের মাটিতেই করতে চান , মিরপুরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা কেউই বলতে পারছে না। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং খেলোয়াড় সম্বন্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে সাকিবের কিছু বক্তব্য রয়েছে। তার নিরাপত্তার প্রশ্ন।
কিন্তু বিষয়টি সম্বন্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে এটা দেশের সরকারের ব্যাপার।
কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের কাছে তার দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে যিনি আছে তিনি নিজে উদ্যোগী হবেন বিষয়টি সমাধানে । দুঃখের বিষয় সেটা দেখতে পেলাম না। বরং বিষয়টিকে এমনভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেটা আর পাঁচটা লোকের ক্ষেত্রে শুনি। নিরাপত্তার প্রশ্নটা সরকারের।
কেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শাকিবের মতো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা পালন করবে না ? বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি গত মাসে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে খুব পরিচিত নন। সাতটি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। মোট রান করেছেন ১০৫ তার মধ্যে একটি খেলায় ৫৭। এহেন ব্যক্তি যে রাজনৈতিক মদতে সভাপতি হয়েছেন সেটা বুঝতে কারোর বাকি নেই। সাকিব আল হাসান ৭০ টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ৪০০০ এর উপর রান । ২৪২ টা উইকেট পেয়েছেন এ পর্যন্ত।
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর যেভাবে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিচারে প্রশ্ন উঠে আসবে। সরকারি হস্তক্ষেপে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে কিনা? আইসিসি কিছুদিন আগেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে সাসপেন্ড করেছিল।
দেশের হয়ে সেরাটা যে খেলোয়াড়টি দিয়েছে যাকে নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহলে আলোচনা হয় সেই খেলোয়াড়টিকে প্রটেকশন দেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ হওয়া উচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের।
সাকিব আল হাসান তার নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছেন। সেটা তো একজন খেলোয়ার বোর্ড কর্তাদের কাছে বলবে। আর তাদের দায়িত্ব খেলোয়াড়ের হয়ে দেশের সরকারের কাছে বক্তব্য রাখা।
বাংলাদেশের সব পত্রিকায় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতির বক্তব্য দেখে রীতিমতন হতাশ হয়েছি । কোথায় কর্মকর্তারা খেলোয়াড়ের পাশে থাকবেন তা নয় তিনি বিষয়টি সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছেন । আমরা সবাই জানি কোনটা নিয়ম কোনটা নিয়ম নয় । কিন্তু সংগঠনের মাথায় যখন যে ব্যক্তি থাকে তখন তার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে খেলোয়াড়টির পাশে দাঁড়ানো।
আশা করবো বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা খেলোয়ারটিকে সম্মান জানিয়ে নিজের দেশে তাকে বিদায় ম্যাচ খেলার সব রকম সুযোগ করে দেবেন। ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে এটা প্রত্যেকেই আশা করবেন দেশবাসীর কাছ থেকে।