মোশাররফ হোসেন: কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আজি হতে শতবর্ষ পরে ” কবিতা যেন মূর্ত হয়ে মিলে গেল বংগবনধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০১তম জন্মদিনের সংগে ।
বাংলাদেশের এসথোপতি ও জাতির জনক বংগবনধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শতবার্ষিকীতে সীমিত আকারে প্যারেড এসকোযারের মনোগগো অনুষ্ঠান বিশ্ববাসী দেখেছে।
অন্যদিকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ঐতিহাসিক এ দিনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন । কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন টুরোডো, চীনের রাষ্ট্রীয় জেন শি পিং,ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে ছেন। চীন বংগবনধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুরাল, ভারত ১০০টি এমবুলেনস পাঠিযেছে।
তারা পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণীতে বলেছেন, বংগবনধুর স্বপ্ন বাসতোবাযন হচ্ছে ।
কানাডার প্রধান মন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে শুভেচ্ছা বাণী পাঠান কানাডার প্রধান মন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো।
ভিডিও বার্তায় তিনি কানাডার সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করে বলেন, তার বাবার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং ১৯৮৩ সালে তার বাবার সাথে বাংলাদেশ সফরের মধুর স্মৃতিচারণ করেন।
জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘আমি সব সময়ই গর্ববোধ করি, আজ থেকে ৫০ বছর আগে বিশ্বের অল্প যে ক’টি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, কানাডা তাদের একটি। ’ গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্রতা কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবার প্রসার ঘটেছে।
তার ভিডিও বার্তার শেষ অংশে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ দিন দিন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইকনোমিক গ্রোথ, অর্থনীতিতে বাংলাদেশি মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশ যেভাবে করোনা মোকাবেলায় সাফল্য অনস্বীকার্য।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে শুভেচ্ছা বাণী পাঠান জাপানের প্রধান মন্ত্রী ইউসি হিদে সুগা।
ভিডিও বার্তায় তিনি জাপানের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি ৫০ বছর আগে বিশ্বের অল্প যে ক’টি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম।’ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে সাথে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বাঙালিদের সাথে জাপানিজদের সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন। জাপানকে ঐতিহাসিক ভাবে বাঙালীরা বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুই এশিয়ার জাপান ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী প্রতিষ্ঠার প্রথম রূপকার। বাংলাদেশ থেকে জাপানে বঙ্গবন্ধুর শীর্ষ সফরের সময় জাপান-বাংলাদেশ আর্থিক সহযোগিতাi দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তিনি বঙ্গবন্ধুর জাপান ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে বলেন,জাপান সফরের সময় শেখ মুজিবুর রহমান স্বভাবগতভাবেই ইচ্ছা প্রকাশ করে কয়েকবার বলেন, তিনি জাপানের মডেলে তার বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, “তিনি যেন আমাদের হিরোভূমি ইতো” ইতো ছিলেন জাপানের প্রধান জাতীয় নেতা।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেলে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং।
ভিডিও বার্তায় তিনি বাংলাদেশের সাথে চীনের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করে বলেন, ৫০ বছর আগে এ দেশের সাধারণ জনগণ তাদের জীবন দিয়ে বাংলাদেশ কে স্বাধীন করেন। বাঙালিকে মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে দিয়ে গেছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা বঙ্গবন্ধুরই অবদান।
তিনি আরও বলেন, চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ১৯৫২ সালের ২ থেকে ১২ অক্টোবর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক রিম পিস কনফারেন্স বা শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু চীনে গিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। সেবারের সেই ভ্রমণ অবশ্য ছিল পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে।
তার ভিডিও বার্তার শেষ বার্তায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, তার শাসনামলে নামগ্লাদেশের জিডিপি শতকরা ৬ ভাগ বৃদ্ধি হয়েছে। এবং দিন দিন চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে হলে আশা করেন তিনি।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক উল্লেখ করে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর জন্যও আদর্শ’।
বুধবার (১৭ মার্চ)জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০দিন ব্যাপী উদ্ভোবনী অনুষ্ঠানের ভাষণে ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের গুরুত্ব আলোকপাত করে মোহামেদ সলিহ বলেন, ‘৭ মার্চ ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইতিমধ্যে এ ভাষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।’
বাংলাদেশ-মালদ্বীপ সম্পর্ক বিষয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।’ অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ একযোগে কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন মোহামেদ সলিহ।
এদিকে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা উঠে ১০দিনের অনুষ্ঠানমালার।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসবেন পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। তবে বুধবারের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মূলত ১০ দিনের এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে মুজিব চিরন্তন থিমের ওপরে। প্রতিদিন আলাদা আলাদা থিমে পরিবেশিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে নানা আয়োজন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছেন আয়োজক কমিটির নীতিনির্ধারক আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠান শুরুতে শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে রবীন্দ্র সংগীত এবং নজরুল সংগীত পরিবেশন করে শিশুরা।