1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
June 16, 2025, 12:09 am

একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার স্থায়ী প্রদর্শনী কানাডায়: সীকৃতি আসছে !

  • প্রকাশিত : বুধবার, মার্চ ২৭, ২০২৪
  • 164 বার পঠিত

২০২০ সালের ডিসেম্বরে সরকার আমাকে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করার কিছুদিনের মধ্যে ১০ জানুয়ারি ২০২১ বাংলাদেশি কমিউনিটি কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল মাধ্যমে (কোভিড-১৯-সংক্রান্ত বাধানিষেধের কারণে) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করি। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের একজন তার বক্তব্যের সময় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার (Genocide) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বিশেষ করে কানাডা কর্তৃক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকার কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেছে কি না, সে বিষয়ে আমার কাছে জানতে চান। বাংলাদেশি-কানাডিয়ান এই ব্যক্তি শহিদ পরিবারের সন্তান।

তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে নির্মমভাবে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে তা উল্লেখ করেন। কানাডা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক দেশ হিসেবে পরিচিত। তাই তিনি আমাকে এই দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য জোরালোভাবে কাজ করতে অনুরোধ করেন। তার এই বক্তব্য কানাডা কর্তৃক ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করতে আমাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা অন্যতম নৃশংস। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানাবিধ শোষণের মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পূর্ব বাংলার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুললে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের (self determination) সংগ্রামের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতাসংগ্রামের জন্য ডাক দেন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে অবদমিত করতে ব্যর্থ হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে বাঙালি বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস অভিযান শুরু করে। বাঙালি জাতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ শুরু হওয়া এই গণহত্যা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলতে থাকে। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ আমাদের বিজয় অর্জিত হয় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

১৯৭১-এর ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে বাঙালি নিধনের পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল এবং ২ লাখের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। হত্যাকারী পাকিস্তানিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। প্রাণের ভয়ে ১৯৭১ সালে ১ কোটির বেশি মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকার, আলবদরদের সহযোগিতায় বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষক, চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। ১৯৭১ সালে নিরপরাধ ও নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। এই গণহত্যার অন্যতম মূল হোতা টিক্কা খান তার সৈনিকদের বলেছিলেন, ‘I want the land and not the people’. ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীতে আজ অবধি যতগুলো গণহত্যা তথা জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নৃশংস হলেও দুঃখের বিষয় গণহত্যা হিসেবে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সেভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সরকারপ্রধান জাতির পিতাকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করার পর পরবর্তীকালে পাকিস্তানের দোসর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যেসব অপশক্তি ক্ষমতার মসনদে বসেছে তারা পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতির এই আত্মত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও গণহত্যার বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হয়নি। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা, অস্বীকার ও বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই (Combating Denial and Distortion), ভবিষ্যতে গণহত্যা বন্ধ করা এবং ভুক্তভোগী ও নির্যাতনের শিকার যারা বেঁচে আছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭১-এর গণহত্যার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অতীব প্রয়োজন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে উদ্যোগ গ্রহণ করে।

অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতো কানাডা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার হলোকাস্ট, রুয়ান্ডার গণহত্যা ও সাম্প্রতিক মায়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যাসহ আটটি গণহত্যাকে দাপ্তরিকভাবে স্বীকৃতি দিলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি। তবে দেশটির সরকার ও জনগণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কানাডায় ১৯৭১-এর গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরে স্বীকৃতি আদায় করতে সব ধরনের কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করি। ইতোমধ্যে সরকার ২০২০ সালের মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উদ্‌যাপনের ঘোষণা দেয়। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে এবং দেশটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও অবদান এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও গবেষণার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীরতর করতে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার তাগিদ অনুভব করি। কতিপয় দেশপ্রেমিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের সহযোগিতায় ও আমার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ম্যানিটোবা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী উইনিপেগে সরকারের কোনো প্রকার আর্থিক সংশ্লেষ ব্যতিরেকে অনুদাননির্ভর Bangabandhu Center for Bangladesh Studies in Canada (BCBS) প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিকন্তু কানাডা সরকার কর্তৃক গত ২৮ বছর ধরে আশ্রিত জাতির পিতার অন্যতম প্রধান হত্যাকারী খুনি নূর চৌধুরীকে Deportation-এর মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করতে কানাডায় ব্যাপক জনমত
গঠনের ভাবনাও BCBS প্রতিষ্ঠায় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

BCBS প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর মাধ্যমে আয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি কানাডাব্যাপী প্রচার করা হয়। এসব সেমিনারে দেশি-বিদেশি গণহত্যা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়। এসব সেমিনারের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, একাত্তরে সংঘটিত নৃশংসতম গণহত্যা সম্পর্কে কানাডাসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই অবগত নয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতির পেছনে বৈশ্বিক রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ বিবেচনা করা হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হলে একাডেমিয়াসহ আন্তর্জাতিকভাবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সঠিকভাবে গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরা জরুরি। আমরা চিহ্নিত করলাম যে, কানাডার উইনিপেগে অবস্থিত দেশটির ক্রাউন করপোরেশনের আওতাধীন কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস (CMHR) ইতোমধ্যে হলোকাস্ট ও রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ অন্যান্য গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই আমরা এই জাদুঘরের কিউরেটর ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. জেরেমি মেলভিন মেরনকে ’৭১-এর গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরি। কয়েক দফা আলাপ-আলোচনার পর ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় BCBS কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস-এ ১৯৭১-এর গণহত্যার তথ্যচিত্র স্থায়ী প্রদর্শনের জন্য আবেদন করে। এরপর শুরু হয় আমাদের আবেদনের পেছনে প্রমাণাদি উপস্থাপনের কাজ। এ লক্ষ্যে ’৭১-এর গণহত্যার নিদর্শন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম মুলার CMHR কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পছন্দকৃত আমাদের উপস্থাপনার নিরপেক্ষ পর্যালোচক হিসেবে এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে CMHR-এর কিউরেটর ড. জেরেমি মেলভিন মেরন-এর ঢাকা সফরের আয়োজন করা হয়। তারা ১৯৭১ সালে রাজধানী ঢাকা ও সংলগ্ন অন্যান্য যেসব এলাকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল সেসব স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং একাত্তরে শহিদ ব্যক্তিদের পরিবার এবং নির্যাতিতদের সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়া এই বিশেষজ্ঞরা সেই সময়কার বিভিন্ন নথিপত্র ও ডকুমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের উপস্থাপনা তথ্যনির্ভর কি না তা খতিয়ে দেখেন। তারা কানাডায় ফেরত এসে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র ও শিক্ষকসহ বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক কমিউনিটি মতবিনিময় সভা করেন। ইতোমধ্যে হাইকমিশনের সহায়তায় BCBS CMHR-এর কিউরেটর ড. জেরেমি মেলভিন মেরনসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি গণহত্যা বিশেষজ্ঞকে নিয়ে কানাডাসহ বিশ্বব্যাপী ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য ২৫ মার্চ ২০২৩ ‘Honoring the Legacy of Bangladesh Genocide: Finding Hope and Healing through Remembering’ শীর্ষক এবং ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ‘Denial and Recognize: The Case of Bangladesh Genocide’ শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে।

CMHR কর্তৃক ১৯৭১ সালের গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শনের বিষয়টি রাজি করানো সহজ ছিল না এবং সমগ্র বিষয়টি বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হয়েছে। এমনকি একপর্যায়ে কানাডায় একটি দূতাবাস থেকে CMHR কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ’৭১-এ কোনো গণহত্যা সংঘটিত হয়নি বলা হয় এবং গণহত্যার তথ্যচিত্র স্থায়ী প্রদর্শন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এমনকি এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে অযাচিত চাপ প্রয়োগ করতে একটি বিশেষ দেশ থেকে আগত ইমিগ্রান্ট কানাডিয়ানদের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা কানাডার সংসদে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক পিটিশন দায়ের করা হয়। এসব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে অবশেষে সম্প্রতি CMHR তাদের Breaking the Silence Gallary-তে ’৭১-এর গণহত্যার তথ্যচিত্র এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির স্থায়ী প্রদর্শন করতে সম্মত হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০২৪-এ স্থায়ী প্রদর্শনীর (‘Permanent Display of the Exhibits of the Genocide’) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে আমরা আশা করছি। CMHR ’৭১-এর গণহত্যার তথ্যচিত্র স্থায়ী প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত কানাডাসহ বিশ্বব্যাপী ১৯৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতির প্রচেষ্টায় একটি বড় মাইলফলক। এর মাধ্যমে কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে ১৯৭১-এর গণহত্যার অফিশিয়াল/আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পথ সহজতর হয়েছে।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার স্থায়ী প্রদর্শনী কানাডায়

কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ৩০ এপ্রিল ২০২৪-এ আমি ঢাকায় ফিরে যাব। এর আগে CMHR-এর এই সিদ্ধান্ত আমাকে আত্মতৃপ্তি দিয়েছে। ইতোপূর্বে লেখার শুরুতে আমি যে শহিদ পরিবারের সন্তানের কথা উল্লেখ করেছি, তিনি কানাডায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক বাঙালিদের নিয়ে আমার এই উদ্যোগকে শুরু থেকেই সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাই হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আমার অবসর-উত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা শুনে তারা ১৯৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতির প্রচেষ্টা থমকে যেতে পারে বলে শঙ্কা বোধ করেন। শহিদ পরিবারের সদস্য হিসেবে ১৯৭১-এর গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য সব ধরনের কূটনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আমার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানান। কানাডা কর্তৃক ১৯৭১-এর গণহত্যার অফিশিয়াল/আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য CMHR কর্তৃক গণহত্যার তথ্যচিত্র স্থায়ী প্রদর্শনের অনুষ্ঠানের পরেই দেশটির সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে হাউস অব কমন্সে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করা আমার পরিকল্পনায় ছিল। আমি আশা করব, আমার উত্তরসূরি আমার ও হাইকমিশনের এই অব্যাহত প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

১৯৭১ সালের নারকীয় গণহত্যার শিকার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে দাবি তা দুর্বল করে দেওয়ার শামিল এবং এই গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতি না পেলে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার ও প্রতিকার পাওয়ায় যে মানবাধিকার তা ক্ষুণ্ণ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ভবিষ্যতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে এমন নির্মম গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, গণহত্যাকারী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের এই জঘন্যতম অপরাধকে ইতিহাস দায়মুক্তি দেয় না ও ক্ষমা করে না। এটি করতে পারলেই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদের রক্তের ঋণ আমরা কিছুটা হলেও শোধ করতে পারব।

লেখক: কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও কানাডায় বঙ্গবন্ধু সেন্টারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক
krahman@mofa.gov.bd

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park