আবুল মোমেনঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণ করেছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা বলেছেন। স্বাধীনতার পরে প্রথম সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সেসবের কথাও তিনি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তবে এখন বড় করে বলার বিষয় হল বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি।
আজ বাংলাদেশ আর দারিদ্র্যপীড়িত অপরের অনুকম্পা প্রত্যাশী দেশ নয়। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম এবং তার মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিকশিত হয়ে বিশ্ব মর্যাদা অর্জন করেছিল দেশ।
কিন্তু ষড়যন্ত্র প্রত্যাশী ঘাতকদের বুলেটের গুলিতে তিনি নিহত হলে দেশ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়। বস্তুতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনৈতিক চিন্তাকেই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছিলেন খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান। তাকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন জেনারেল এরশাদ ও বেগম জিয়া। সেটি ছিল প্রত্যাখাত পাকিস্তানবাদী ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও চরম দক্ষিণপন্থী ভাবধারার রাজনীতি। এভাবে দেশ প্রায় তিন দশক চলেছে। এর অবসান হয়েছে ২০০৭ সনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। আর তারপরে ২০০৯ সনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পূর্ণ কর্তৃত্বে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বাংলাদেশকে হারানো মূল খাতে ফিরিয়ে এনেছেন। তারই ফলে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক কলংক মোচন ও দায় পালন করে আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।
মানুষের গড় আয়ু ও মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে এ সময়ে, যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, কৃষি ও শিল্পের চাকা ঘুরছে এবং তার ফল বাংলাদেশ পাচ্ছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়ছে। করোনার মধ্যেও বৈদেশিক শ্রমআয় অনেক বেড়েছে। এর ফলে যেমন জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের বৃত্ত ভেঙেছে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
নেতৃত্ব আমাদের ঠিক আছে। জনগণকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম লাগবে এ কথা ঠিক, তবে তার সাথে মেধার সংযোগ ঘটাতে হবে। চাই পরিকল্পনা, সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ দক্ষতা। এখানে এখনও ঘাটতি রয়েছে,ঘাটতি রয়েছে সুশাসন ও মানবাধিকার রক্ষায়। দুর্নীতি এখনও বড় মাথাব্যাথার কারণ, অদক্ষতার বৃত্তও ভাঙতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব, সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক বাস্তবায়ন মিলেই একটি দেশের উন্নতি ঘটে। এ তিনের সমন্বয় চাই দ্রুত যাতে উন্নয়নের গতি আরও দ্রুততর হয়, প্রকল্প থেকেও আমরা সময়মতো অভীষ্ট সুফল লাভ করতে পারি।