1. doorbin24bd@gmail.com : admin2020 :
  2. reduanulhoque11@gmail.com : Reduanul Hoque : Reduanul Hoque
June 16, 2025, 12:28 am

যশোরে বছরে গড়ে ৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন

  • প্রকাশিত : বুধবার, এপ্রিল ৬, ২০২২
  • 178 বার পঠিত
যশোরে বছরে গড়ে ৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন

সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে কৃষির সূতিকাগার যশোরে। এই জেলার উৎপাদিত সবজি ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। এমনকি বিদেশেও তা রপ্তানী হচ্ছে। শীত ও গ্রীষ্মকালীন ৩৩টি সবজির মধ্যে ১৪ ধরনের সবজি উৎপাদনে শীর্ষে যশোর জেলা। প্রতি বছর গড়ে ৫ লাখ টন সবজি সরবরাহকারী জেলাটির অর্থনীতি কয়েক বছর ব্যবধানে সবজি নির্ভর হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও যশোর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরে গ্রীষ্মকালে সবজি উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৪৭ হাজার টন। তবে এ সময় ২০ ধরনের সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, করলা, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ডাঁটা শাক, পেঁপে, পেয়ারা, ড্রাগন ও কলা। এছাড়া শীতকালে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৯ হাজার টন। এটি ২০১৮-১৯ সালের পরিসংখ্যান।  এখন জমির পরিমান ও সবজী উৎপাদন আরো বেড়েছে।  এসময় সাধারণত বেগুন, বাধাকপি, কুমড়া, পালংশাক ও লালশাক বেশি হয়। সার্বিকভাবে ৫ লাখ ৫৬ হাজার টন সবজি উৎপাদন হলেও এ অঞ্চলের চাহিদা মেটানোর পর সারা দেশে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার টন।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক হেমায়েত হোসেন জানান, জেলার অর্থনীতি সবজি নির্ভর হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর বাড়ছে সবজি উৎপাদন। মূল্য স্থিতিশীল হওয়ায় কৃষক এতে আগ্রহী হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালে
সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে চূড়ামনকাঠি হয়ে বারোবাজার পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ও যশোর-নড়াইল সড়কের বাঘারপাড়া এলাকায় প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশেই চোখে পড়বে নানা ধরনের সবজি ক্ষেত। আবার যশোর-মাগুরা বাইপাস সড়কের আড়পাড়া পর্যন্ত প্রায় পুরো এলাকায় সবজির সঙ্গে অন্যান্য ফসলের আবাদ হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, যশোরের সকল উপজেলায় এখন পুরোদমে সবজির আবাদ চলছে ১২ মাস জুড়ে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় সদর, মনিরামপুর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। এখানকার কৃষকরা সবজি চাষ করে ভালো মুনাফা ঘরে তুলছেন।

এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুরের কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে শিম আবাদে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। পুরো মৌসুমে তিন হাজার কেজি শিম বিক্রি করা যায়। প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়। একই এলাকার নাটুয়াপাড়ার কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে কাঁকরোলের আবাদে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ১০ মনের বেশি উৎপাদন হয়। ভালো মুনাফার আশা করে কৃষক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজের প্রয়োজনে একসময় এই এলাকায় সবজির আবাদ হলেও এখন বাণিজ্যিক আবাদে ব্যস্ত কৃষক। অন্যান্য ফসলে মুনাফা না পাওয়ায় সবজি আবাদকেই প্রাধান্য দেন তারা। এখানকার আবহাওয়া সবজি চাষে বেশ উপযোগী। কেননা জেলায় বৃষ্টি হয় তুলনামূলক কম। তবে সবজি আবাদ বাড়ায় ধান ও গমের আবাদ খানিক কমেছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, একই জমিতে প্রতিনিয়ত একই ধরনের সবজি আবাদে জমির উর্বরা শক্তি ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিপর্যয়ে পড়বেন এখানকার কৃষক। তাই শস্য বীমার প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থা কৃষক ও ব্যবসায়ী বান্ধব নয়। স্থানীয় বাজার গুলোর অবকাঠামো বেশ দুর্বল। রাজধানীতে পণ্য নিতে বড় একটি নদী পার হতে হয়। অবশ্য আসন্ন জুনে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সব্জীতে পদ্মা নদীর বিড়ম্বনা শেষ হবে নিশ্চিত। এখন সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে সবজি নষ্ট হচ্ছে। সার্বিকভাবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এতে চরম ক্ষতির শিকার হন।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের গ্রীষ্মকালে ১৪,৬৮৫ হেক্টর হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। গত বছর এ সময়ে আবাদ হয়েছিল ১৪,০১০ হেক্টর জমিতে। এসব সবজি ক্ষেত থেকে উঠে যাওয়ার পর কৃষকরা শীতকালীন সবজি আবাদ শুরু করেছেন।

প্রাকৃতিক বালাইনাশক পদ্ধতিতে উৎপাদিত যশোরের বিষমুক্ত সবজি রপ্তানি হচ্ছে সিঙ্গাপুরে। প্রথম দফায় ৭০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি রপ্তানি করা হচ্ছে দেশটিতে। যশোর থেকে বিদেশের বাজারে সবজি রপ্তানি শুরু হয় ২০১৭ সালে। আরব-আমিরাত, কাতার, ওমান, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্সে পাঠানো হয় বাঁধাকপি, আলু, সিম, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা সবজি। কিন্তু, করোনার
কারণে বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। ফের সিঙ্গাপুরে পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে রপ্তানি। রপ্তানিকারক শরিফুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘কোভিডের কারণে অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে আমরা পরিস্থিতি মোটামুটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এসময়ে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি এক্সপোর্ট করা হয়েছে। আমরা যদি জৈব বালাই নাশক ব্যবহার নতুন ভাবে করতে পারি তাহলে বিশ্ববাজারে এই এলাকার সবজি বড় একটি জায়গা দখল করে নেবে। রপ্তানিকারকরা সরাসরি সবজি সংগ্রহ করায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।

সবজি চাষিরা জানান, রপ্তানিকারকরা সবজি সরাসরি সংগ্রহ করায় বাজারের স্বাভাবিক দামের চেয়ে ২-৩ টাকা বেশি পাচ্ছি, রপ্তানি হচ্ছে বলে আমরা বেশ আনন্দিত। রপ্তানিযোগ্য সবজি উৎপাদনের জন্য যশোরে ৫০০+ বেশি চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

সলিদারিদাদ নেটওয়ার্ক এশিয়ার সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ মুজিবুল হক বলেন, জলবায়ুর কারণে যশোর এমন একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে যেখানে সব ধরনের সবজি চাষ করা সম্ভব। এ কারণে যশোরকে সরকারিভাবে আমরা প্রথম এক্সপোর্ট ক্লাস্টার হিসেবে ঘোষণা করেছি। সিঙ্গাপুর ছাড়াও এখানে উৎপাদিত ৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ সবজি রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে কাজ করছে জেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এভাবে এক্সপোর্ট কার্যক্রম চলতে থাকলে চাষিরা চাষে আগ্রহ পাবে। মাঠ পর্যায়ে সবাই নিরলসভাবে কাজ করছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে দেশ থেকে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের তাজা ফল ও সবজি রপ্তানি করা হয়েছে। ২০২০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ডলারে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার ফারুক মিডিয়াকে জানান, কোন অঞ্চলে কী ফসল হবে, তা মূলত আবহাওয়া ও কৃষকের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ভালো দামের সঙ্গে কম বৃষ্টিপাতের কারণে যশোর জেলা সবজি আবাদের জন্য উপযুক্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
© All rights reserved © 2024 doorbin24.Com
Theme Customized By Shakil IT Park